প্রিন্ট এর তারিখঃ এপ্রিল ২৯, ২০২৪, ৪:০০ পি.এম || প্রকাশের তারিখঃ এপ্রিল ১২, ২০২০, ৬:১২ পূর্বাহ্ণ
কেমন কাটছে জবি শিক্ষার্থীদের হোম কোয়ারেন্টাইন
মেহেরাবুল ইসলাম সৌদিপ, জবি প্রতিনিধিঃ
মহামারী করোনা ভাইরাসের প্রভাবে হঠাৎ থমকে গেল এই শহর বলা যায় গোটা বিশ্ব এমনকি প্রাণ প্রিয় চিরচেনা ক্যাম্পাসটা ও। করোনা ভাইরাসের সৌজন্যে চলছে এখন পুরো পৃথিবী। অঘোষিত লক ডাউনে দেশ। সবাইকে ঘরে থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ভয়াল করোনা ভাইরাসের কারণে হোম কোয়ারেন্টাইনে আছেন সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে চাকুরিজীবী, বিভিন্ন শ্রেণীপেশার মানুষ তথা ক্রীড়াঙ্গন এবং সিনেমা জগতের ব্যক্তিত্বরা। সরকারি নির্দেশনায় বন্ধ রয়েছে সকল শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান, বন্ধ রয়েছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি) ও। লকডাউন হওয়ার ঠিক আগেই অচল হয়ে গিয়েছে গোটা শহর। গৃহবন্দি সকলে। তবে বাসায় থাকা ব্যাপারটা খুব একটা আপত্তি নেই।
[caption id="attachment_3876" align="alignnone" width="1440"] জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়[/caption]
হোম কোয়ারেন্টাইন কি?
হোম কোয়ারানটাইনের বাংলা অর্থ স্বেচ্ছায় গৃহবন্দি। হোম কোয়ারানটিন মানে বাইরে ঘুরে বেড়িয়ে ফুর্তি করা নয়।
আন্তর্জাতিক স্বাস্থ্য বিধি (আইএইচআর -২০০৫)-এর আর্টিকেল ৩২ অনুসারে, যে সব দেশে নভেল করোনাভাইরাস বা (কোভিড-১৯)-এর স্থানীয় সংক্রমণ ঘটেছে সে সব দেশ থেকে যে সব যাত্রী এসেছেন এবং আসবেন (দেশি-বিদেশি যে কোনো নাগরিক), যারা দেশে শনাক্ত হওয়া কোভিড-১৯ আক্রান্ত ব্যক্তিদের সংস্পর্শে এসেছেন এবং যার অথবা যাদের কোনো শারীরিক উপসর্গ নেই, তাদের ১৪ দিন কোয়ারানটাইন পালন করা আবশ্যক।
বন্ধুদের সঙ্গে হৈ-হুল্লোড় আর আড্ডা নেই। ক্লাসে বসে ঘণ্টা পর ঘণ্টা নেই পড়াশুনা। প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস সব কিছু বদলে দিয়েছে। শিক্ষার্থীদের দৈনন্দিন জীবনে এনেছে ব্যাপক পরিবর্তন। তারপরও থেমে নেই জীবন। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ থেকে রক্ষা পেতে হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকলেও অনেক শিক্ষার্থী অনলাইনে ক্লাসে অংশ নিচ্ছেন, পরিকল্পনা মাফিক সময়কে কাজে লাগাচ্ছেন। আবার কাছের মানুষদের হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকতে সচেতন করে তুলছেন।
পুরান ঢাকার ঐতিহ্যবাহী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগের প্রথম বর্ষের তিন মেধাবী শিক্ষার্থী সাদিয়া নওশিন বিন্তি, মাশিয়াত ইবনাত তৈষী, ফাওজিয়া আফিয়া জিনিয়া। হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকা দিনগুলো নিয়ে অনুভূতি তুলে ধরেছেন প্রতিদিনের সময় এর কাছে।
[caption id="attachment_3888" align="alignnone" width="474"] প্রতিদিনের সময়[/caption]
সাদিয়া নওশীন বিন্তি বলেন, করোনা ভাইরাসের কারণে থমকে আছে গোটা বিশ্ব, বন্ধ হয়ে আছে পুরো বিশ্বের অর্থনীতি। এমনকি এই ভাইরাসের প্রভাব ছড়িয়েছে আমাদের দেশেও। দিন দিন এই ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়া মানুষের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। তাই একজন সচেতন নাগরিক হিসেবে আমি গৃহবন্দি থাকাই বেশি ভালো মনে করেছি। ক্যাম্পাস বন্ধ থাকার কারণে ক্যাম্পাসের সবার কথাই অনেক মনে পড়ছে। টানা দুই সপ্তাহেরও বেশি গৃহবন্দি থাকার কারণে মাঝেমধ্যেই বিরক্তিবোধ করি। এই সময়টা বিভিন্ন অনলাইন কোর্স করার মাধ্যমে পার করছি।
[caption id="attachment_3884" align="alignnone" width="832"] সাদিয়া নওশীন বিন্তি[/caption]
পরিশেষে সকলের প্রতি অনুরোধ রইল ঘরে থাকুন,সুস্থ থাকুন। প্রান্তিক পর্যায়ে দেশের অধিকাংশ মানুষে করোনাভাইরাস, হোম কোয়ারেন্টাইন সম্পর্কে ধারণা নেই। আমাদের মতো শিক্ষার্থীদের তাকে সচেতন করা উচিত। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে ইনশাআল্লাহ দেখা হবে সবার সাথে এই প্রত্যাশায় রইলাম।
#stay_home
#stay_safe
মাশিয়াত ইবনাত তৈষী বলেন, 'আমি লাস্ট ২০ দিনের মতো বাসায়। সবাইকে অনেক বেশি মিস করতেসি। আগে সকালে ক্লাসের জন্য উঠতে কষ্ট লাগত আর এখন মনে হচ্ছে সকাল ৬ টায় ক্লাস দিলেও বের হয়ে চলে আসব। ফোন ও এখন বিরক্তিকর লাগা শুরু হয়েছে। সব গল্পের বই ও শেষ পড়া। বাসায় বসে করার মতো আর কিছুই নেই।
[caption id="attachment_3885" align="alignnone" width="1364"] মাশিয়াত ইবনাত তৈষী[/caption]
ভার্সিটির ফার্স্ট ইয়ারেই এইরকম একটা পৃথিবী ব্যাপী সমস্যার জন্য এতকিছু মিস করব এটা ভাবিনি। এরকম দুর্যোগ পরিস্থিতি আগে কখনো ফেইস করিনি।করোনা ভাইরাস থেকে রক্ষা পাওয়ার একমাত্র উপায় হলো বাসায় অবস্থান করা। তাই আমি মনে করি সকলের এই কঠিন সময়ে বাসায় অবস্থান করা জরুরি। আর আমি চাই খুব দ্রুতই ক্লাস, পরীক্ষা, ঘুরাঘুরি আর বন্ধুদের সাথে আড্ডায় ফিরে যেতে।
ফাওজিয়া আফিয়া জিনিয়া বলেন, 'পরিবারের সাথে ঢাকায় ই অবস্থান করছি।
খুবই অবসর সময় যাচ্ছে। সারাদিন কাজের কাজ তেমন কিছুই করি না। সকালে একটু দেরিতেই উঠা হয়। নাস্তা করে আম্মুর সাথে রান্নার কাজে সাহায্য করতে যাই যদিও পারি না তেমন তাই একটু করার পর আর ভালো লাগে। দুপুরে খাওয়া-দাওয়ার পর একটু ঘুমাই। ঘুম থেকে উঠে মন চাইলে এমনিতেই নুডুলস রান্না করি। টিভিও দেখি নাই এই দিনগুলোতে, শুয়ে থাকি পড়াশোনা করিই নাই। আর এভাবেই রাত টা পার করে দেই। সারাদিন ফোন চালিয়েই দিন পার করে দিচ্ছি। সাথে আম্মুর সারাদিন বকা তো আছেই। সবার সাথে রাতের খাবারটা খেয়ে আবার ফোন নিয়ে বসি। একটা সময় ঘুম পেলে ঘুমিয়ে পড়ি। তবে বন্ধুদের ও প্রিয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে খুব মিস করছি।
[caption id="attachment_3886" align="alignnone" width="416"] ফাওজিয়া আফিয়া জিনিয়া [/caption]
করোনা ভাইরাসের প্রভাবে টানা ২৪ দিন বাসায় থেকে খুব অস্বস্থি বোধ করছি। এখন বাইরে যাইতেও ভয় লাগে। তাই সব সময় সাবধানতা অবলম্বন করছি। আপুনির সাথে দুষ্টুমি করেই দিন কাটিয়ে দেই। করোনা ভাইরাস থেকে রক্ষা পাওয়ার একমাত্র উপায় হলো বাসায় অবস্থান করা। তাই আমি মনে করি সকলের এই কঠিন সময়ে বাসায় অবস্থান করা জরুরি।
2023 Protidinershomoy