নাইমুজ ইনাম নাইম পেশাগত দিক দিয়ে একজন নৃত্যশিল্পী। নিযুক্ত আছেন বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি তে নৃত্যশিল্পী (গ্রেড-৩) পদে পাশাপাশি জেলা শিল্পকলা একাডেমি নড়াইলে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হিসাবে কাজ করে চলেছেন নিরন্তর।
আন্তর্জাতিক নৃত্য দিবস উপলক্ষ্যে তার সাথে কথা বললে তিনি বলেন, ‘ একজন নৃত্যশিল্পীর সবচেয়ে বড় উৎসব হচ্ছে নৃত্য দিবস। ২৯ এপ্রিল আন্তর্জাতিক নৃত্যদিবস,দিনটি বিশ্বের প্রতিটি নৃত্যশিল্পীর জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং আনন্দের একটি দিন।
২৯ শে এপ্রিল আন্তর্জাতিক নৃত্যদিবস হলেও এর কার্যক্রম বাংলাদেশে শুরু হয়ে যায় ২০ এপ্রিল থেকে।বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি এবং বাংলাদেশ নৃত্যশিল্পী সংস্থা যৌথ আয়োজনে দেশের বিভিন্ন স্থানে মেলা, র্যালি, নৃত্যানুষ্ঠান সহ নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে প্রতিবছর পালন করা হয় নৃত্যদিবস।আমি নিজেও অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করি বছরের শুরু থেকেই এই দিনটির জন্য। শত ব্যস্ততা ও উৎসব মুখর পরিবেশে আমরা নৃত্যশিল্পীবৃন্দ দিনটি উৎযাপন করে থাকি। বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি’র নৃত্যশিল্পীবৃন্দ সহ বাংলাদেশের প্রখ্যাত নৃত্যগুরু নৃত্য পরিচালক কোরিওগ্রাফার অসংখ্য নৃত্যশিল্পীরা অধীর আগ্রহে থাকি
২৯ এপ্রিল আন্তর্জাতিক নৃত্য দিবসের জন্য। কিন্তু এবারের চিত্রটা সম্পূর্ণই ভিন্ন। বিশ্ব আজ করোনা ভাইরাসের ভয়াল থাবার মুখে।নৃত্যদিবস নিয়ে এবার আর নেই কোন আয়োজন নেই উৎসবের রঙ মাখা সেই প্রতিচ্ছবি। কিন্তু আমরা সকলে চাইলে ভিন্নভাবে পালন করতে পারি আমাদের এই প্রাণের উৎসবকে, দিতে পারি এর এক ভিন্নরূপ। দেশের এই সংকটময় পরিস্থিতিতে আমাদের অনেক নৃত্যশিল্পী আছে যারা অস্বচ্ছল দেশের বিভিন্ন অনুষ্ঠান জাতীয় ও আন্তর্জাতিক দিবস সমূহের অনুষ্ঠান বন্ধ থাকার কারণে তারা আর্থিকভাবে অনেক ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে পরেছে। আমি স্বচ্ছল নৃত্যশিল্পীদের অনুরোধ করবো তারা যেনো আমাদের অস্বচ্ছল নৃত্যশিল্পী পাশে এসে দাঁড়ান।’
তিনি আরও বলেন, ‘ আমি আমার জায়গা থেকে ব্যক্তিগতভাবে যতটুকু সম্ভব সেভাবে অসচ্ছল শিল্পীদের সহায়তা করছি,ভবিষ্যতে ও করার আশা ব্যক্ত করছি। এছাড়াও গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির সহযোগিতায় আমরা এ কাজটি অব্যাহত রাখতে পারবো বলে আশা করি। এছাড়াও বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক জনাব লিয়াকত আলী লাকী প্রতিটি জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে অসচ্ছল শিল্পীদের জন্য ২০ হাজার টাকা প্রদান করেছেন এবং পাশাপাশি জেলা শিল্পকলা একাডেমির স্থানীয় তহবিল থেকে আরো ৪০ হাজার টাকার আর্থিক সহযোগিতা প্রদানের নির্দেশ দিয়েছেন। এ বছর কোন নৃত্যশিল্পী যেনো অনাহারে দিন না কাটায় সেটাই হোক আমাদের এ বছর নৃত্যদিবসের প্রত্যয়। মানুষ হিসেবে আমরা কতটা মানবিক সেটা প্রমাণ দেয়ার সময় এখন। আমরা চাইলে নৃত্যদিবসের আনুষ্ঠানিকতা ঘরে বসেই পালন করতে পারি তথ্য প্রযুক্তির এই যুগে। আমাদের দেশের এই পরিস্থিতিতে আমরা প্রতিটি শিল্পী এক একজন যোদ্ধা,আর আমাদের শিল্প আমাদের যুদ্ধাস্ত্র। প্রতিটি শিল্পীকে তাদের শিল্প চর্চার মাধ্যমে দেশেবাসীকে সাহস জুগিয়ে যাওয়ার আহবান জানাচ্ছি। আতংকিত না হয়ে সচেতনতা ও মনুষ্যত্ববোধ প্রকাশের মাধ্যমে আমরা নিরাপদে থাকতে পারি। করোনা ভাইরাস এর কারণে মানুষ থেকে মানুষের দূরত্ব বজায় রাখা , সংস্কৃতির মেলবন্ধন থেকে শুরু করে সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করা এটাই করোনা ভাইরাস থেকে মুক্তি পাওয়ার প্রধান উপায়।
পরিশেষে এই নৃত্যশিল্পী বলেন, ‘আমরা সবাই এখন একটা যান্ত্রিক জীবনের মধ্যে আছি। কাজ নিয়ে অনেক ব্যস্ত ছিলাম কিন্তু এখন সময় কোন ভাবে কাটছে না এই পরিস্থিতিতে আমাদের সকলের উচিত বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা যে নিয়মগুলো দিয়েছে সে নিয়মগুলো আমাদেরকে মেনে চলা পাশাপাশি আমাদের সরকারকে সহযোগিতা করা এবং সরকারের দেওয়া নির্দেশনা গুলো মেনে চলা। মহান আল্লাহ অবশ্যই আমাদের এই মহামারী থেকে মুক্তি দিবেন খুব দ্রুতই ইনশাল্লাহ।’
Leave a Reply