1. admin@protidinershomoy.com : admin :
  2. nasimriyad24@gmail.com : ডেস্ক রিপোর্ট : ডেস্ক রিপোর্ট
  3. wp-configuser@config.com : James Rollner : James Rollner
বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ০৩:৩৮ পূর্বাহ্ন

সুনাম ও সুখ্যাতি দিয়ে কি চলে সাংবাদিকের সংসার?

সংবাদ দাতার নাম
  • সময় : বৃহস্পতিবার, ৩০ এপ্রিল, ২০২০
  • ৭৪৪ জন পড়েছেন

অধ্যাপক শামসুল হুদা লিটন

করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে দৈনিক সময়ের আলো পত্রিকার সাংবাদিক হুমায়ূন কবীর খোকনের মৃত্যু হয়েছে। নিজ লেখনীর মাধ্যমে যে সাধারণ মানুষকে সাহস যুগিয়েছিলেন তিনি নিজেই করোনার শিকার । হুমায়ুন কবির খোকন এই দুঃসময়ে নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে একজন সাংবাদিক হিসেবে পেশাগত দায়িত্ব পালন করছেন। পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে তিনি ভুলেই গিয়েছিলেন নিজের নিরাপত্তার কথা, পরিবার পরিজনের ভালো- মন্দের কথা। করোনার মহা ছোবলের হাতে হুমায়ুন কবির খোকন প্রথম শহীদ সাংবাদিক।

মাঠে কাজ করতে গিয়ে করোনায় আক্রান্ত হন এই সাহসী মিডিয়া ব্যক্তিত্ব। তিনি আজ চলে গেলেন না ফেরার দেশে। এ অবস্থায়
কীভাবে চলবে সদ্য প্রয়াত সাংবাদিক হুমায়ূন কবীর খোকনের সংসার? কে দিবে সন্তানের লেখা পড়ার খরচ? এ ধরনের প্রশ্ন আসাই স্বাভাবিক। করোনায় আক্রান্ত বা মৃত্যুবরণকারী সাংবাদিকদের জন্য কোন প্রকার প্রণোদনার ঘোষণা এখনো হয়নি । সরকারি কর্মকর্তা- কর্মচারীদের জন্য ইতিমধ্যে প্রণোদনা ঘোষণা করা হয়েছে। করোনা ভাইরাসের এই সংকটকালীন সময় দায়িত্ব পালনকালে চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মী, প্রশাসন-পুলিশ ও প্রজাতন্ত্রের অন্য কর্মকর্তা-কর্মচারীরা প্রয়োজনমতো ঝুঁকি ভাতা পাবেন। করোনায় আক্রান্ত হয়ে কোনো দায়িত্ব পালনকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীর মৃত্যু হলে তার পরিবার পদমর্যাদা অনুসারে এককালীন বিশেষ অর্থ সহায়তা পাবেন। থাকবে বিমার ব্যবস্থাও। এরকম একগুচ্ছ সামাজিক সুরক্ষা ব্যবস্থা থাকবে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য। এই মহতি প্রণোদনার ঘোষণা এসেছে খোদ দেশের প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে। এটা সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত । প্রশংসনীয় কাজ। অবশ্যই সাধুবাদ পাওয়ার যোগ্য এই প্রণোদনার ঘোষণা। এতে অনেকের মধ্যে দায়িত্বপালনের ভীতি কাটবে। ঝুঁকি নেওয়ার প্রবণতাও বাড়বে। সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা রাষ্ট্রের আনুকূল্য পাবেন এটা অস্বাভাবিক নয়। এটাএকটা স্বাভাবিক পাওয়া ।

কিন্তু সাংবাদিক কিংবা গণমাধ্যমের সাথে জড়িত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য করোনা পরিস্থিতিতে কোন ধরনের সুযোগ সুবিধা নেই। নেই প্রণোদনা। নেই তাদের পেশাগত নিরাপত্তা । সাংবাদিকদের জন্য নেই আর্থিক, সামাজিক, নিরাপত্তা। মানুষের কাছে দেশের বিদেশের সর্বশেষ খবর তৈরি করে পাঠক – শ্রোতাদের কাছে দ্রুত পৌঁছে দেন যে মিডিয়া কর্মী তাদের খবর কেউ রাখেনা। সমাজের নানা অসঙ্গতি তুলে ধরেন যে সাংবাদিক তাদের বৈষম্য যেন কেউ দেখেনা । দেশের ক্রান্তিকালে মেধা মননে সাংবাদিক প্রয়োজন। প্রয়োজন ফুরিয়ে গেলে গণমাধ্যম কর্মীদের আর কেউ খোঁজ নেয়ার প্রয়োজনও মনে করেনা। কাজ শেষে সাংবাদিকদের সবাই ভুলে যায়। এদের পরিবার কীভাবে চলে কেউ খোঁজ খবর নেয়না। সমাজের মধ্যবিত্ত শ্রেণির মতো কষ্টকে বুকে চেপে ধরে জীবন যাপন করেন অধিকাংশ সাংবাদিক। সুনাম ও সুখ্যাতি দিয়েতো আর সংসার চলেনা। বাজারের খরচ আসেনা। সন্তানের লেখা পড়ার খরচ যোগার হয়না এ সুনাম জস খ্যাতি দিয়ে। সাংবাদিকরা আজীবন নেশারঘোরে সমাজকে দিয়েই যায়, বিনীময়ে খুব কমই পায়। আমি প্রকৃত সৎ সাংবাদিকদের কথাই বলছি।

যতই দিন যাচ্ছে ততই যেনো প্রকৃত গণমাধ্যমকর্মীরা অবহেলার পাত্রে পরিণত হচ্ছেন । সংবাদপত্র বা গণমাধ্যমকে রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ বলা হয়। কিন্তু বাস্তবে এ স্তম্ভের মর্যাদা আদৌ প্রতিষ্ঠিত হয়নি। প্রকৃত চিত্র এমন যে, গণমাধ্যম কর্মীরা যেনো আজ এক ধরনের তুচ্ছ তাচ্ছিল্যের পাত্রে পরিণত হয়েছেন । গণমাধ্যমকর্মীদের জন্য যে রাষ্ট্রীয় বা সামাজিক সুরক্ষার ব্যবস্থা থাকার কথা সেটা নেই বললেই চলে। সাংবাদিকদের নিরাপত্তা ও সুরক্ষার দাবী এখনো অপূর্ণই রয়ে গেলো। কখনো সাংবাদিকরা নিরাপত্তার সুযোগ ভোগ করতে পারেনি। ক্ষেত্র বিশেষ যে নাগরিক অধিকার পাওয়ার কথা একজন সংবাদকর্মীর, তাও আজ উপেক্ষিত।

সাম্প্রতিক সময়ের সাংবাদিক নিপীড়নের প্রকৃষ্ট উদাহরণ কুড়িগ্রামের সাংবাদিক
আরিফুল ইসলাম। কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসনের হাতে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতনের শিকার হয়েছিলেন সাংবাদিক আরিফুল ইসলাম। এ ঘটনার প্রকৃত বিচার এখনো হয়নি। জেলা প্রশাসক সাময়িক প্রত্যাহার করা হয়েছেন মাত্র। অবস্থা দেখে মনে হয়, সাংবাদিক পিটালে, সাংবাদিক নির্যাতন করলে কিছু হয় না। যেখানে সাংবাদিক খুন হলে একটা চার্জশিট পর্যন্ত হয় না সেখানে সাংবাদিক নির্যাতনের বিচার চাওয়াও এক ধরনের বোকামি ছাড়া আর কিছুই নয়। দেশে এ পর্যন্ত বিভিন্ন সময় অসংখ্য সাংবাদিক খুন হয়েছেন। এখনো সাংবাদিকরা দেশের বিভিন্ন জায়গায় খুন, নিপীড়ন ও নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন । মিথ্যা মামলায় অনেকেই হয়রানির শিকার হচ্ছেন। মিডিয়া মালিকদের দ্বারা চাকরিচ্যুতির ঘটনাও ঘটছে। একটি কথা না বললেই নয়-সাংবাদিক দম্পত্তি সাগর-রুনি খুন হয়েছে অনেক বছর হলো। প্রশ্নজাগে এরা দুজন সাংবাদিক বলেই তদন্তে এত ধীরগতি? সাগর-রুনি হত্যার প্রতিবেদন দাখিলের সময় পিছিয়েছে একবার নয় দুই বার নয় ৭২ বার। স্বাধীনতার এত বছর পরও সাংবাদিকদের স্বাধীনতা, নিরাপত্তা ও সুরক্ষার বিষয় নিয়ে কথা বলা বড়ই দুঃখজনক। আশা করি খুব দ্রুত সাংবাদিকদের ভাগ্যের আকাশে অন্ধকার দূরীভূত হয়ে আলোর বিচ্ছুরণ ঘটবে।

অধ্যাপক শামসুল হুদা লিটন
সাংবাদিক, কবি ও কলামিস্ট

সংবাদটি আপনার সামাজিক মাধ্যমে শেয়ার দিন

এই ক্যাটাগরীর আরোও সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

বিশেষ সংখ্যা

%d bloggers like this: