1. admin@protidinershomoy.com : admin :
  2. nasimriyad24@gmail.com : ডেস্ক রিপোর্ট : ডেস্ক রিপোর্ট
  3. wp-configuser@config.com : James Rollner : James Rollner
শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০২:৩৮ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম
রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের মুজিবনগর দিবস পালন রাজশাহীতে বিশ্ব হিমোফিলিয়া দিবস পালিত ১৭ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য একটি ঐতিহাসিক দিন: ইতালী আওয়ামী লীগ কাতানিয়া শাখা রাজশাহীতে নিক্বণ নৃত্য শিল্পী গোষ্ঠীর বর্ষবরণ অনুষ্ঠিত রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডে বর্ষবরণ উদযাপিত  বিএমডিএ: ইবিএ প্রকল্পে দুর্নীতি, ভোগান্তিতে গ্রামীণ কৃষক ভূল্লীতে বাংলা নববর্ষ ১৪৩১ উপলক্ষে মঙ্গল শোভাযাত্রা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ঠাকুরগাঁওয়ে চেম্বার অফ কমার্স নির্বাচনের একটি প্যানেলের সংবাদ সম্মেলন মাদক ব্যবসায়ীর মৃত্যুকে পূঁজি করার চেষ্টা করছে ফখরুল-এমপি সুজন ঠাকুরগাঁওয়ে মোটরসাইকেল মুখোমুখি সংঘর্ষে নিহত ২ যুবক

কম্বাইন্ড হার্ভেস্টারের চাকায় পিষ্ট বঙ্গবন্ধুর ‘দাওয়াল’-ড. মীজানুর রহমান

সংবাদ দাতার নাম
  • সময় : মঙ্গলবার, ৫ মে, ২০২০
  • ৬৩৫ জন পড়েছেন

গণমাধ্যম বিশেষ করে ইলেকট্রনিক ও স্যোশাল মিডিয়ার কারণে আর্থ সামাজিক ও পরিবেশগত সমস্যাগুলো আমরা এখন খুব দ্রুত জানতে পারি। যেকোনো বিষয়ে কোন খবর বা বিশ্লেষণ যদি আসে আর সেটা যদি জনগুরুত্বপূর্ণ বা দর্শক শ্রোতাদের আগ্রহের বিষয় হয় তাহলে মিডিয়া হাউসগুলোর মধ্যে প্রতিযোগিতা শুরু হয় কে কত বেশি গুরুত্ব দিয়ে বিষয়টি তুলে ধরবে। যেমন, শেরপুরে একটি বন্য হাতীর আটকে যাওয়া, হাওরে ধান কাটা শ্রমিকের অভাব, লকডাউনের মধ্যে গার্মেন্টস খুলে যাওয়া, ঈদ পার্বণে টার্মিনালে মানুষের ভীড়, ট্রেনের সময়সূচির বিপর্যয় অথবা যাত্রীদের কাছ থেকে অধিক ভাড়া আদায়।

ইদানীং কালের ঘরবন্দী না থাকা, N-95 মাস্ক এবং করোনা ব্যবস্থাপনায় স্বাস্থ্য দপ্তরে প্রস্তুতি ও চলমান ব্যর্থতা, যখন যেটা নিয়ে শুরু হয় সবকটি মিডিয়াতে একই বিষয়ে বিশেষ প্রতিবেদন, সংবাদ বিশ্লেষণ, টকশো সবকিছু একসাথে চলতে থাকে। যার যে বিষয়ে কথা বলার যোগ্যতা নেই তাকেও সে বিষয়ে কথা বলতে দেখা যায়। বিগত কয়েকদিন যাবত যার যে কাজ করার যোগ্যতা, দক্ষতা নেই তাকে সে কাজ করতে দেখা যাচ্ছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের একটি বড় রসাত্মক বিষয় হচ্ছে রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের ধান কাটা ও তা প্রায় বিনাখরচে প্রচার করা।

ধানকাটার মৌসুমে শ্রমিক সংকট নতুন কিছু নয়। এক অঞ্চলের উদ্বৃত্ত শ্রমিকদের অন্য অঞ্চলে যেয়ে ধানকাটা এদেশে অনেক পুরনো প্রথা। বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনীতে ( পৃঃ১০৩) ধানকাটার সংকটটি এভাবে এসেছে, “… ফরিদিপুর ও ঢাকা জেলার লোক, খুলনা ও বরিশালে ধান কাটার মরশুমে দল বেঁধে দিনমজুর হিসেবে যেত। এরা ধান কেটে ঘরে উঠিয়ে দিত। পরিবর্তে একটা অংশ পেত। এদের ‘ দাওয়াল ‘ বলা হত। হাজার হাজার লোক নৌকা করে যেত। ফেরার সময় তাদের অংশের ধান নিজেদের নৌকা করে বাড়িতে নিয়ে আসত। এমনিভাবে কুমিল্লা জেলার দাওয়ালরা সিলেট জেলায় যেত। এরা প্রায় সকলেই গরীব ও দিনমজুর। প্রায় দুই মাসের জন্য ঘরবাড়ি ছেড়ে এদের যেতে হত। যাবার বেলায় মহাজনের কাছ থেকে টাকা ধার নিয়ে সংসার খরচের জন্য দিয়ে যেত। ফিরে এলে ধার শোধ করত। দাওয়ালদের নৌকা খুব কমই ছিল। যাদের কাছ থেকে নৌকা নিত তাদেরও একটা অংশ দিতে হত। এরা না গেলে আবার জমির ধান তুলবার উপায় ছিল না। একসাথেই প্রায় সব ধান পেকে যায়। তাই তাড়াতাড়ি কেটে আনতে হয়। স্থানীয়ভাবে এত কৃষাণ একসাথে পাওয়া কষ্টকর ছিল। বহু বৎসর যাবত এ পদ্ধতি চলে আসছিল।… ”

আজ থেকে ষাট বছর আগে বা তারও আগে ধানকাটা শ্রমিকের অভাব ছিল, এখন যেমনটি আছে। ধান কাটার সময় ৩৭ টি জেলায় শ্রমিক উদ্বৃত্ত থাকে আর ২৬ টি জেলায় শ্রমিকের ঘাটতি দেখা দেয়। প্রতি বছরই মৌসুমী শ্রমিকদের কর্মসংস্থানের বড় একটা উৎস হয় ধানকাটা। অনেক শ্রমিকই দেড় দুইমাস যাবত এ জেলায় সে জেলায় ধানকাটা, মাড়াই, ঝাড়াই শুকানো ও বাজারে নেওয়া আনার কাজ করে পাঁচ ছয়মাস চলার মত জীবিকার সংস্থান করে।

আমি নিজে প্রযুক্তিবান্ধব হয়েও কম্বাইন্ড হার্ভেস্টারের ব্যবহার বিলম্বিত করার পক্ষপাতি। বিশেষ করে করোনা সংকটের কবলে আমাদের শ্রমিকদের কর্মসংস্থানের জায়গা গুলো যখন একেবারেই সংকোচিত হয়ে আসছে সেখানে এই শ্রমিকরা যাবে কোথায়! কিছু পুরনো অর্ডার অনুযায়ী কাপড় সেলাইয়ের কাজ থাকায় গার্মেন্টস শ্রমিকদের গ্রাম থেকে ডেকে আনা হয়েছে। আমি নিশ্চিত, এদের বড় একটা অংশকে গ্রামেই ফিরে যেতে হবে। কারণ অর্ডার না থাকার কারণে বহু কারখানাই বন্ধ হয়ে যাবে। আমেরিকা ইউরোপের বাজারে নতুন পোশাকের ব্যবসা জমে উঠতে আরো কমপক্ষে দুই তিন বছর সময় লাগবে। মধ্যপ্রাচ্য থেকে প্রচুর অদক্ষ শ্রমিক ফিরে আসবে। তেলের মূল্যের ক্রমাবনতির কারণে সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো বিদেশী শ্রমিক দিয়ে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা সহ সবকাজ করিয়ে নেওয়ার বিলাসিতা ধরে রাখতে পারবে না।

আমাদের গার্মেন্টস শ্রমিক ও প্রবাসী অদক্ষ শ্রমিকরা বেশিরভাগই আগে কৃষি শ্রমিক ছিল অথবা পারিবারিক কৃষি খামারে কাজ করত। এরা সবাই গ্রামে বা দেশে ফিরে যাবে। এমনিতেই আমাদের পাঁচ কোটি শ্রমিকের নির্দিষ্ট কর্মসংস্থান নেই। ব্যাপক শিল্পায়ন হতেও অনেক সময় লাগবে। তাহলে এরা কোথায় কাজ করবে?

করোনার সুযোগে কৃষির যান্ত্রিকীকরণ বেড়েছে। ৫০% থেকে ৭০% ভর্তুকি মূল্যে মাত্র ২৮/২৯ লাখ টাকায় বড় কৃষকরা একটি কম্বাইন্ড হার্ভেস্টার কিনছে। যা ঘন্টায় এক একর জমির ধান কাটা, মাড়াই ও ঝাড়াই করে বস্তাবন্দি করতে পারে। নিজের জমির ধান কাটা শেষে ভাড়ায় অন্যের জমির ধান কেটে দিচ্ছে কম্বাইন্ড হার্ভেস্টার মালিকরা। নেত্রকোনা, কিশোরগঞ্জ ও সুনামগঞ্জে আগে থেকেই কম্বাইন্ড হার্ভেস্টার ছিল ২১৫ টি এবং নতুন যোগ হয়েছে ১৬৯ টি অর্থাৎ নতুন পুরাতন মিলিয়ে তিন জেলায় ৩৮৪ টি কম্বাইন্ড হার্ভেস্টার ধান কাটছে। এর ফল হচ্ছে কৃষিকাজে উৎপাদনশীলতা বাড়ছে, খরচ কমছে। ফলে কৃষিকাজে কর্মসংস্থান সংকোচিত হচ্ছে। কৃষিকাজ অলাভজনক হওয়ার কারণ কোনটি- কৃষিপণ্যের কম দাম নাকি কৃষি শ্রমিকের উচ্চ মজুরী?

আমার মতে উৎপাদিত পন্যের বিশেষ করে ধানের দাম কম হওয়াটাই আমাদের কৃষির মূল সংকট। রাজনৈতিক স্পর্শকাতরতার কারণে আমরা কখনোই চালের দাম বাড়তে দেই না। আমেরিকা, কানাডা বা অষ্ট্রেলিয়ার বাণিজ্যিক কৃষিপণ্যের সাথে আমাদের শ্রমঘন পারিবারিক কৃষি খামারের পন্য প্রতিযোগিতায় টিকতে পারে না।

আন্তর্জাতিক বাজারে খাদ্য দ্রব্যের দামের সাথে তাল রাখতে গিয়ে কৃষিপণ্যের বাজার মূল্য কমে যাওয়া একটি বিশ্বসংকটে পরিণত হয়েছে। বেশিদামে কৃষিপণ্য ক্রয়ের ব্যাপারে আমাদের মানসিকভাবে প্রস্তুতি নিতে হবে।

কৃষকদের জন্য করোনা প্রণোদনা প্যাকেজের টাকা সত্যিকার কৃষকরা পাবে কিনা জানিনা। খাদ্য মন্ত্রণালয় লটারির মাধ্যমে কৃষকদের থেকে ধান কিনছে। অর্থাৎ ভাগ্যবানরাই কেবল সরকারের কাছে ধান বিক্রি করতে পারবে। লটারী করা হচ্ছে এর তাৎপর্য হচ্ছে বাজারে বিক্রয় করার মত যাদের উদ্বৃত্ত আছে এমন কৃষকদের মোবাইল নাম্বারসহ একটি তালিকা সরকারের কাছে আছে। আমার প্রস্তাব হচ্ছে, তালিকাভুক্ত সব কৃষক থেকে দশ মণ করে ধান কেনা হোক। গুদামে স্থান সংকুলানের সংকট থাকলে কৃষককেই সেই ধান সংরক্ষণ করতে বলা হোক। গুদামে জায়গার সংকট যদি অনেক দিনেও সমাধান না হয় তাহলে কৃষকের গোলা থেকেই সরকার খোলা বাজারে ধান বিক্রি করে টাকা ফেরত আনতে পারবে। স্থানীয় প্রশাসনের সকল পক্ষ এব্যাপারে অন্তর্ভুক্ত হতে পারে। দ্বিতীয় সুপারিশটি হচ্ছে, বাংলাদেশসহ বিশ্ব অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়ানোর আগ পর্যন্ত অর্থাৎ শিল্প ও সেবাখাত চাঙ্গা না হওয়া পর্যন্ত কৃষির যান্ত্রিকীকরণ বিলম্বিত করা হোক। বেঁচে থাকুক জাতির জনকের দাওয়ালরা।

লেখকঃ উপাচার্য, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়।

ড. মীজানুর রহমান

সংবাদটি আপনার সামাজিক মাধ্যমে শেয়ার দিন

এই ক্যাটাগরীর আরোও সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

বিশেষ সংখ্যা

%d bloggers like this: