1. admin@protidinershomoy.com : admin :
  2. nasimriyad24@gmail.com : ডেস্ক রিপোর্ট : ডেস্ক রিপোর্ট
  3. wp-configuser@config.com : James Rollner : James Rollner
শনিবার, ২৮ জুন ২০২৫, ০৭:২০ অপরাহ্ন
শিরোনাম
পবিত্র ঈদুল ফিতরের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন হাবিব খান ইসমাইল বিএমডিএ’র আরও দুই কর্মকর্তা সাসপেন্ড, চেয়ারম্যানকে ভর্ৎসনা বিভাগীয় চ্যাম্পিয়ন হওয়ায় ফুটবল দলকে সম্মানী দিলেন আ: কাদের উৎসব রাজশাহী টেনিস প্রিমিয়ার লীগের খেলোয়াড় বাছাই সম্পন্ন চেয়ারম্যানের ইন্ধনে প্রকৌশলীকে ফেরাতে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের একাংশের মানববন্ধন মহান স্বাধীনতা দিবসে পর্তুগাল বিএনপির উদ্যোগে আলোচনা সভা ও ইফতার মাহফিল অনুষ্ঠিত ঠাকুরগাঁওয়ে ট্রাফিক বিভাগকে ট্রাফিক সাইনবোর্ড দিলো স্কাউটস ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনাল এর সহযোগিতায় ও এম এ এফ-এর আয়োজনে ইফতার মাহফিল  সোনালী ব্যাংক পিএলসি জিয়া পরিষদের উদ্যোগে ইফতার বিতরণ ঠাকুরগাঁওয়ে ইসলামিক অলিম্পিয়াডের বিজয়ীদের মাঝে পুরষ্কার বিতরণ

হ্যা, আমি এবং আমার স্ত্রী করোনা আক্রান্ত

আবদুল্লাহ আল ইমরান
  • সময় : শুক্রবার, ১৫ মে, ২০২০
  • ৫২৮ জন পড়েছেন

আক্রান্ত হওয়ার আগ পর্যন্ত আমরা দুজনই মাঠে-ঘাটে পেশাগত দায়িত্ব পালনে কাজ করেছি। সমাজের অসঙ্গতিগুলো যেমন তুলে এনেছি, তেমনি অসহায় মানুষের পাশেও দাঁড়িয়েছি।

হাসপাতালগুলোতে রোগিদের স্যাম্পল কালেকশনের অব্যবস্থাপনাসহ নানা ভোগান্তি তুলে ধরা, যাদের কথা কেউ বলে না, সেই অবহেলিত মানুষগুলোর অহসায়ত্ব প্রচার এবং ‘করোনার অষুধ’ নামে কর্পোরেট অপপ্রচার বন্ধে আমি এবং আমার ‘সার্চলাইট’ টিম মাঠে ছিল করোনার শুরু থেকেই। অন্যান্য স্টেশন তাদের অপরাধ-অনুসন্ধান বিষয়ক অনুষ্ঠান বন্ধ রাখলেও, সার্চলাইট এক পর্বের জন্যও বন্ধ হয়নি।

অন্যদিকে আমার স্ত্রী সানজিদা আবদুল্লাহ তিন্নি করোনার ‘ডেঞ্জার জোন’ হিসেবে পরিচিত ঢাকার কেরানীগঞ্জে দিনরাত মানুষের সেবায় কাজ করেছে। প্রতিদিন অসহায় মানুষের কাছে ত্রাণ পৌঁছে দেওয়া, বাজার মনিটরিং, কারখানা বন্ধ রাখা, যায়গায় যায়গায় লকডাউনের ব্যবস্থা করা, আক্রান্ত রোগিদের চিহ্নিত করে চিকিৎসার ব্যবস্থা করাসহ সরকারের যাবতীয় নির্দেশনা তৃণমূলে বাস্তবায়ন করেছে সর্বোচ্চ ঝূঁকি নিয়ে।

দুজনই যেভাবে করোনা পরিস্থিতি মোকাবেলায় পেশাগত দায়িত্ব পালন করেছি, তাতে আমরা ধরেই নিয়েছিলাম আজ বা কাল, আমরা আক্রান্ত হবোই। কেননা চাইলেও আমাদের ঘরে থাকার সুযোগ নেই। আমাদের কাজের ধরণই এমন।
ফলে আমাদের একটা পূর্ব মানসিক প্রস্তুতি ছিল। কি কি করতে হবে, কিভাবে সামলে নেবো এসব নিয়ে দুজনের মধ্যে বিস্তারিত আলোচনাও হয়েছে।

তবুও ‘আক্রান্ত হতে পারি’ এবং ‘আক্রান্ত হয়ে যাওয়া’ যে দুটো সম্পূর্ণ ভিন্ন বিষয়, তা টের পেলাম রিপোর্ট হাতে পাওয়ার পর। বিশেষত, তিন্নি যখন আমাকে জড়িয়ে কান্নারুদ্ধ কন্ঠে বলল, আমাদের একটা বাবুও নাই!
সেই মুহুর্তটাই ছিল সবচেয়ে কঠিন। কতোটা কঠিন, তা লিখে বা মুখে বলে বোঝানো যাবে না। কেবল তারাই অনুভব করতে পারবে, যারা এর ভিতর দিয়ে যেতে বাধ্য হবে। নিশ্চয়ই সৃষ্টিকর্তা সে পরীক্ষা সবার নেবেন না!

তিন দিন আগে থেকেই আমার জ্বর, তিন্নির গলা ব্যথা এবং দুজনেরই কাশি ছিল। এর জন্য টেলিমেডিসিন নিচ্ছিলাম লেখক ও ডাক্তার আশরাফ জুয়েলের কাছ থেকে। আক্রান্ত হওয়ার পর যুক্ত হলেন বিএসএমএমইউয়ের ডাক্তার মেহেদী। এই দুজনের পরামর্শে ঔষধ ও নিয়ম-কানুনগুলো কঠোরভাবে মানতে শুরু করেছি।

আমার জ্বরটা এখন দিনে থাকে না, রাতে সামান্য আসে। তবে
কাশি আছে। সারাক্ষণ কাশি কাশি একটা ভাবও আছে। এরপরও আমি মনে করি, আমি বেশ ভালো আছি।
তিন্নির অবস্থার কিছুটা অবনতি হয়েছিল আজ। এই স্টাটাস যখন লিখছি তখন গায়ে সামান্য জ্বর এবং গলায় তীব্র ব্যথায় ও কথা বলতে পারছে না। কিন্তু অক্সিজেন স্যাচুরেশন ভালো। অক্সিমিটারে মেপে দেখেছি।
ফলে আমরা মনে করি , উপসর্গ থাকার পরও আমাদের হাসপাতালে যাওয়ার মতো পরিস্থিতি এখনও তৈরি হয়নি, বরং আরও সিরিয়াস কোনো রোগির জন্য সেই দুটো সীট প্রস্তুত থাকুক।

চ্যানেল টোয়েন্টিফোর মালিক এবং ও সিনিয়ররা, প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তারা, আমার সার্চলাইট টিম, সরকারের একাধিক মন্ত্রী ও সচিব, পুলিশের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বসহ এমার্জেন্সিতে ভূমিকা রাখতে পারবে এমন অনেকে সার্বক্ষণিক আমাদের খোঁজ-খবর রাখছেন।

ঢাকায় অবস্থানরত তিন্নির দূরের আত্মীয় এবং কার্যত কিছু অচেনা মানুষ, রান্না করে বাসার সামনে দিয়ে গেছেন। আরও কয়েকজনের উদ্যোগ ঠিকানা জানতে না পারায়, আটকে গেছে। উদ্বিগ্ন সবাইকে বলতে চাই, আমাদের আপাতত কিছু প্রয়োজন নেই। হলে আমরাই জানাব।
তবে এই ফাঁকে এও বলে রাখি, দু-একজনকে মামুলি কিছু দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। তারা ফোন বন্ধ করে বসে আছে! তাদের মনে করোনা আতঙ্ক ভর করেছে!
আমার একটুও মন খারাপ হয়নি। গতরাতেই নিউজে দেখলাম, বাস যাত্রায় ঘুমের মধ্যে হৃদরোগে ছেলে মারা যাওয়ায় করোনা আতঙ্কে বৃদ্ধ মাকে তার ছেলের লাশসহ গভীর রাতে রাস্তায় ফেলে গেছে বাসের চালক ও যাত্রীরা। সারা রাত লাশের পাশে বিলাপ করেছেন মা! করোনা এমনই এক অচেনা নতুন পৃথিবীর মুখোমুখি করেছে আমাদের।

ডাক্তারের পরামর্শে ফেসবুক এবং ম্যাসেঞ্জার অ্যাপস ১১ তারিখই আনইন্সটল করেছি। ফোনও ধরতে পারছি না। জ্বরের কারনে ঘুম না এলেও কথা বললেই মাথা ব্যথা করে। আর তিন্নি তো গলা ব্যথ্যায় কথাই বলতে পারে না।
ডাক্তার, পরিবার এবং ইমার্জেন্সিতে সহায়তা করতে পারবেন- এমন ব্যক্তি ছাড়া কারো সঙ্গে কথা হয়নি। আমাদের দুজনের যারই একটু ভালো লাগছে, সে-ই অন্যজনের টেক-কেয়ার করছি, যেহেতু বাসায় আমাদের আর কেউ নেই। ফলে শত শত ফোন এবং ম্যাসেজের রিপ্লাই দেওয়া সম্ভব নয়। আশা করছি সবাই পরিস্থিতি বুঝবেন।

আর ফেসবুকে ঢুকে তো আমি বিস্ময়ে হতভম্ভ হয়ে গেছি।
এতো এতো শুভ কামনা, এতো এতো আবেগী বার্তার কয়েকটা পড়ে চোখে পানি চলে এসেছে। বুঝতে পারছি মানুষ আমাদের কতোটা ভালোবাসে, আমাদের বেঁচে থাকাটাও তাদের কাছে কতোটা জরুরি।
মাঝে মাঝে এই ভেবে খুব খারাপ লাগতো যে, জীবনের অর্ধেকেরও বেশি সময় পার করে ফেলেছি, পাঁচটা উপন্যাস ছাড়া নিজের উপার্জিত আর কোনো সম্পদ বা সঞ্চয় নেই।
কিন্তু আজ বুঝলাম, গাড়ী-বাড়ি নয়, মূলত মানুষের ভালোবাসাই এক জীবনের বড় সঞ্চয়। ইতিবাচক কাজের মাধ্যমে কারো হৃদয়ে ঠাঁই পাওয়ার চেয়ে গৌরবের, এর চেয়ে মর্যাদার আর কিছু নেই।
আমি যদি এই মুহুর্তে মরেও যাই, সত্যি বলছি, আমার কোনো আফসোস থাকবে না। লেখক হিসেবে, সাংবাদিক হিসেবে মানুষ আমাকে এবং গুণী মেয়ে হিসেবে তিন্নিকে সবাই পছন্দ করে জানতাম। কিন্তু সেই ভালোবাসা যে এত তীব্র, এত প্রবল মমমতামাখা আর মনোমুগ্ধকর- আমরা তা জানতাম না। জেনে ভালো লাগছে, বড় ভালো লাগছে। সুখের মতো ব্যথা হচ্ছে বুকে!

সব সময় মানুষের জন্য কাজ করেছি।
কাউকে আঘাত দিলে, পরক্ষণেই নিজে অনুতাপে পুড়েছি। বিপদে মানুষের পাশে থেকেছি। জেনেছি, অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানোর চেয়ে পূণ্যের কাজ আর নেই। সে সব পূণ্যের উছিলায় হলেও সৃষ্টিকর্তা নিশ্চয়ই আমাদের এ যাত্রায় রক্ষা করবেন।

করোনা শুরু হওয়ার পর পেশাগত দায়িত্বের পাশাপাশি কয়েকজন লেখক বন্ধু মিলে অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে ‘সমন্বয়’ নামে একটা উদ্যোগ নেই আমি আর তিন্নি। আমাদের বই বিক্রির টাকা এবং বেতনেরও কিছু অংশ সেখানে দান করি। সেই অর্থ দিয়ে এ পর্যন্ত প্রায় শতাধিক অসহায় শিক্ষার্থী ও পরিবারের কাছে খাবার, ঔষধসহ নানা প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি পৌঁছে দিয়েছি আমরা। ডাকসু নেতা আসিফ তালুকদারের মাধ্যমে সারা দেশে সাহায্য বিতরণের দায়িত্বে ছিলাম আমি। করোনা আক্রান্ত হওয়ায় সেই কার্যক্রমে সাময়িক অসুবিধা হবে, এ জন্য খুব খারাপ লাগছে। সুস্থ্য হলে ফের ঝাঁপিয়ে পড়ব।

এই লেখাটা না লিখলে, অনেকেই স্থির থাকতে পারতেন না, বারবার জানতে চেয়ে টেক্সট দিচ্ছেন, তাই শতো কষ্টের মাঝেও লিখলাম। আপনাদের প্রার্থনাই আমাদের এই মুহুর্তে একান্ত কাম্য।

খুব বেশি মনে পড়লে, আমার লেখা আর তিন্নির আঁকা উপন্যাসগুলো পড়তে পারেন। কোলের শিশুকে পড়ে শোনাতে পাড়েন কুনো ব্যঙের বন্ধুরা। দেখবেন, আমরা কাছেই আছি। ওই সৃষ্টিকর্মগুলোই তো আপনাদের মাঝে আমাদের বাঁচিয়ে রাখবে।

আশা করছি করোনাকে জয় করে দ্রুতই ফিরবো।
জানাবো সে অভিজ্ঞতার কথা। আবার বই নিয়ে ছুটবো এক শহর থেকে আরেক শহর, এক দেশ থেকে আরেক দেশ। নতুন নতুন সাহসী অনুসন্ধানে আপনাদের মুগ্ধ করবো ফের।

প্রিয় লেখক গ্যাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেজের শেষ চিঠির কয়েকটা লাইন দিয়ে শেষ করি, যে অংশটা আমি হৃদয়ের দখিন দুয়ার উপন্যাসে ব্যবহার করেছিলাম।

‘…আজকের পর আগামীকাল আসবে, আর জীবন আমাদের আবার সুযোগ করে দেবে সব কিছু ঠিকমতো করার; কিন্তু যদি ভুল করে থাকি, আর সময় বলতে আমার কাছে আছে শুধু আজকের দিনটুকু, তাহলে আমি প্রাণপণে তোমাকে জানব যে, তোমাকে কতটা ভালোবাসি আমি, বলব তোমাকে কোনোদিনই ভুলব না…’

আবার দেখা হবে।
আর দেখা হলে, আমাদের কে কি খাওয়াবেন, কোথায় কোথায় ঘুরতে নিয়ে যাবেন, সেই তালিকা করে ফেলেন জলদি। আর যদি কিছু বলতে ইচ্ছে হয়, ইনবক্সে লিখে রাখুন, আমি ভালো বোধ করলেই লেখাগুলো পড়বো।

সবাই সুস্থ্য থাকুন।
করোনা মুক্ত থাকুন।
শুভ কামনা।

 

সংবাদটি আপনার সামাজিক মাধ্যমে শেয়ার দিন

এই ক্যাটাগরীর আরোও সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

বিশেষ সংখ্যা

You cannot copy content of this page