দুই কিলোমিটার রাস্তায় কাদা-ময়লা পানিতে একাকার। আর এই কর্দমাক্ত রাস্তা দিয়ে চলাচলে তিনটি গ্রামের কৃষক, শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন পেশার হাজারো মানুষের চরম ভোগান্তি পোহাচ্ছে।
তানোর উপজেলার তালন্দ ও পাঁচন্দর ইউপির উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সংলগ্ন মোহর-লছিরামপুর-কৃষ্ণপুর সড়ক থেকে মোহর হঠাৎপাড়া থেকে লছিরামপুর হয়ে কৃষ্ণপুর স্কুল মাঠ পর্যন্ত দুই কিলোমিটার মাটির রাস্তার বেহাল দশায় দুর্ভোগের শেষ নেই। মোহর থেকে লছিরামপুর রাস্তাটিও চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। তবে কৃষ্ণপুর থেকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বিকল্প পথে যেতে হলে ৩/৪ কিলোমিটার রাস্তা ঘুরে যেতে হয়।
বর্ষাকালের এই সময়ে সামান্য বৃষ্টি হলেই রাস্তাগুলো কাদা ও ময়লা পানিতে ডুবে যায়। এতে মোহার-লছিরামপুর ও কৃষ্ণপুর গ্রামের মানুষের চলাচলের যানবাহন, মাইক্রোবাস, রোগী পরিবহনের অ্যাম্বুলেন্স, রিক্সা-ভ্যান, নসিমন-করিমন, অটোবাইক, মোটরসাইকেল-বাইসাইকেল চালানো, এমনকি পায়ে হেঁটে চলাচল করাও কষ্টকর ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়।
লছিরামপুর গ্রামের ব্যবসায়ী শমসের আলী, ব্যবসায়ী ওমর আলী, কৃষক বাহার ও কৃষক এনামুল হক জানান, গত ২৫ বছর আগে লছিরামপুর গ্রামে আগুনে পুড়ে একই বাড়িতে পাঁচ জনের মৃত্যু ও ১১ জন আহত হয়েছিল, সেই ঘটনাকে কেন্দ্র করে তানোর থানায় প্রথম ফায়ার সার্ভিস অফিস প্রতিষ্ঠা করা হয়। কিন্তু ২৫ বছর পর আজও ওই দুই কিলোমিটার রাস্তার একই অবস্থা। ফলে ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি আসতে পারে না, কোন মুমুর্ষ রোগীকে হাসপাতালে নেয়ার আগেই মৃত্যু হয় রাস্তায়।
তারা আরো জানান, শুধু রাস্তার জন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের সংখ্যা তুলনামূলক কম। বর্ষকালে কৃষকের ধান গরুর গাড়িতে নিতে বস্তা প্রতি ভাড়া দিতে হয় ১০০ টাকা। এখন কাদায় রাস্তা এতটাই প্যাকে ভরা যে, গরুর গাড়িও চলাচল করতে পারছে না। ফলে মহিষের গাড়িই আমাদের একমাত্র ভরসা।
মোহর গ্রামের ব্যবসায়ী উজ্জ্বল কুমার সূত্রধর বলেন, ‘কয়েকদিন আগে লছিরামপুরের এক গর্ভবর্তী নারীকে খাটলীতে লাশ নেয়ার মতো করে চারজনে তানোর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। দীর্ঘদিন থেকে এই রাস্তার বেহাল দশা। আর বর্ষা এলে চলাচলে বাড়ে সীমাহীন বিড়ম্বণা।’
এ নিয়ে পাঁচন্দর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল মতিন ও তালন্দ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবুল কাশেম দীর্ঘদিন রাস্তাটির বেহাল দশার কথা স্বীকার করে বলেন, ‘মোহর-লছিরামপুর-কৃষ্ণপুর রাস্তাটি পাকাকরণের জন্য সংশ্লিষ্ট অধিদফতরে আবেদন করা হয়েছে। বরাদ্দ আসলে কাজ শুরু করা হবে।’
উপজেলা এলজিইডি প্রকৌশলী আবদুল্লাহ আল মামুন জানান, মোহর-লছিরামপুর-কৃষ্ণপুর রাস্তাটির জন্য সংশ্লিষ্ট দফতরে আবেদন করা হয়েছে। অনুমোদন হলে টেন্ডারের মাধ্যমে কাজ শুরু করা হবে।
Leave a Reply