খুলনা জেলা প্রতিনিধিঃশিক্ষাগত যোগ্যতার ন্যুনতম সনদ ছাড়াই সব ধরনের দাঁতের চিকিৎসা দিচ্ছেন কয়রায় মোস্তফা কামাল নামে এক ব্যাক্তি। তিনি খুলনার কয়রা উপজেলা সদরে চেম্বার খুলে এমন প্রতারণা চালিয়ে যাচ্ছেন।
অসৎ দন্ত চিকিৎসকদের দৌরাত্ম্যে দিশেহারা উপজেলাবাসী। উপজেলার প্রায় ৬০ শতাংশ মানুষ কোনো ধরনের যাচাই বাছাই না করেই এসব চিকিৎসকদের শরণাপন্ন হন। নামে বেনামে বিভিন্ন রকমের রঙিন ব্যানার ও সাইনবোর্ড টাঙিয়ে এবং সুসজ্জিত চেম্বার বসিয়ে এরা এ অঞ্চলের মানুষের কাছ থেকে অবৈধভাবে হাতিয়ে নিচ্ছেন কাড়ি কাড়ি টাকা। তাদের সরকারি কোনো অনুমোদন থাক বা না থাক কয়েক বছরের হাতুড়ে অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়েই চিকিৎসা দিয়ে আসছেন বছরের পর বছর। নামধারী চিকিৎসকরা আবার একাধিক চেম্বার খুলে রমরমা ব্যবসা চালাচ্ছেন। তাদের কোনো সরকারি সনদ, রেজিস্ট্রেশন,বা নিজেদের কোন প্রাতিষ্ঠানিক সনদ পত্র না থাকলেও তারা চিকিৎসার নামে প্রতারণা করে যাচ্ছেন প্রতিনিয়ত।
অনুসন্ধানে দেখা যায়, খুলনার কয়রা উপজেলায় নামে বেনামে একাধিক দন্তরোগের অপচিকিৎসা কেন্দ্র গড়ে উঠেছে। যাদের বেশীর ভাগই নাম সর্বস্ব। তবে হাতুড়ে হলেই বা কি এদের চেম্বারে রয়েছে বেশ সুসজ্জিত অত্যাধুনিক যন্ত্রসামগ্রী। এদের কাজ হচ্ছে দাঁত তোলা, দাঁতে পুটিং করা, দাঁত বাঁধানো, দাঁত স্কিলিং করা, ক্যাপ লাগানো, দাঁতে রুটক্যানেল করাসহ দাঁত ওয়াশ করা। এরা আবার একেক কাজের জন্য একেক রকমের বিল হাঁকায় রোগীদের কাছ থেকে। রোগী যদি নিতান্ত গরীবও হয় সেক্ষেত্রেও ওই একই বিল রাখা হয় বলে জানা গেছে। এসব ডাক্তারদের দামি আসবাবপত্র অথবা আকর্ষণীয় একটি চেম্বার থাকলেও নেই শুধু তাদের অনুমোদিত ডিগ্রী । পড়াশোনার দৌড় তেমন না হলেও তারা নামের আগে ডাক্তার,অভিজ্ঞ চিকিৎসক এবং নামের পরে নানা পদবী লাগিয়ে রেখেছেন। কেউ কেউ কয়েক বার জরিমানার শিকার হয়েছেন। তার পরে কৌশলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে ম্যানেজ করে পুনরায় প্রতারণা ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে।
জানা যায়, চিকিৎসকের সহকারী হিসেবে কাজ করেই হয়ে গেছেন দন্ত চিকিৎসক।প্রাতিষ্ঠানিক বিডিএস ডিগ্রী নেই। চেম্বার সাজিয়ে নিজেই শুরু করেন অবৈধ ব্যবসা। রোগী দেখতে নিয়ে থাকেন চড়া ফি। দাঁতের জটিল অপারেশনেও অংশ নেন। তার চেম্বারে অসংখ্য রোগীকে চিকিৎসা দিচ্ছেন তিনি। রয়েছে তার বিরুদ্ধে অপচিকিৎসা দেওয়ার অভিযোগ, কিছু দিন আগে আর কার্ড ও প্যাডে নামের আগে বসিয়েছিলেন চিকিৎসক শব্দটি ও পরে বসিয়েছিলেন নানা ডিগ্রী ধারী পদবী ।কয়রা সদরের মেইন রোড সংলগ্ন তরফদার মার্কেটে সাগর ডেন্টাল কেয়ার নামের মালিক ও চিকিৎসক তিনি।
স্থানীয় জনগণ ও উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়,মেডিকেল ও ডেন্টাল কাউন্সিল আইন ২০১০ এর অধিনে নিবন্ধন ব্যতীত ও চিকিৎসা সংক্রান্ত কোন ডিগ্রী বা ডিপ্লোমা না থাকা স্বত্ত্বেও দন্ত চিকিৎসক হিসাবে প্রাকটিস করে প্রতারণার অপরাধ করাকালে গত গত বছরের ৭ মার্চ দুপুরে মোবাইল কোর্টে ধৃত হন। এসময় সাগর ডেন্টাল কেয়ার কথিত দন্ত চিকিৎসক মোস্তফা কামালকে (৪৮) দোষী সাব্যস্ত করে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট শিমুল কুমার সাহা।পাশাপাশি ব্যবহার যোগ্য ঔষধ সামগ্রী ও চিকিৎসা যন্ত্রপাতি জব্দ করা হয়। কিন্তু আবার কিছদিন পর কর্তৃপক্ষকে ম্যানেজ করে ভিজিটিং কার্ড, প্যার্ড ও সাইন বোর্ডে চিকিৎসক মুছে আবারো প্রতারণা করে যাচ্ছে কথিত দন্তচিকিৎসক মোস্তফা কামাল।
কয়রা সদর ইউনিয়নের বাসিন্দা রেজাউল করিম বলেন, আমার মেয়ের দাঁতের ভুল চিকিৎসা করেন তিনি। পরে খুলনা শহরে নিয়ে চিকিৎসা করাতে প্রায় ৫০ হাজার টাকা ব্যয় হয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন বলেন, প্রতারক মোস্তফা কামালের কোন সংশ্লিষ্ট ডিগ্রী বা শিক্ষাগত যোগ্যতা নেই।প্রকৃত পক্ষে তিনি অষ্টম শ্রেণী পাশ। দন্ত চিকিৎসার ওপর ও প্রাতিষ্ঠানিক জ্ঞান না থাকা সত্বেও দন্ত চিকিৎসার নামে মানুষের সাথে দীর্ঘদিন ধরে প্রতারণা করে আসছে। ভুল চিকিৎসায় অনেকের অনেক ক্ষতি হয়েছে বলে জানান তারা। ভুক্তভোগীসহ সচেতন এলাকাবাসী অবিলম্বে উল্লেখিত ভুয়া দন্ত চিকিৎসক মোস্তফা কামালের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়ার জোর দাবি জানিয়েছে।
এব্যাপারে সাগর ডেন্টাল কেয়ারের মালিক কথিত দন্ত চিকিৎসক মোস্তাফা কামালের কাছে জানতে তিনি বলেন,
আমার কাছে কতৃপক্ষের লিখিত কপি আছে ও অন্যরা যেভাবে চিকিৎসা প্রদান করছেন সে অনুযায়ী আমি চিকিৎসা প্রদান করছি। এছাড়া তিনি শিক্ষাগত সদন পত্র নিয়ে কোন সদোত্তর দিতে পারেন নি।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ সুদীব বালা বলেন,আমি এখানে নতুন এসে জানতে পেরেছি এ অঞ্চলে ভুয়া বেশ কিছু ডাক্তার রয়েছেন যাদের (বি.এম.ডি.সি) কোনো অনুমোদন নেই। অথচ তারা চেম্বারে বসে অনায়াসে চিকিৎসাসেবা প্রদান করছে। ঐসকল ভুয়া দন্ত চিকিৎসকদের ব্যাপারে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে। তবে তিনি এও বলেন যে, এরকম কোনো অভিযোগ আমার কাছে আসেনি যদি আসে তাহলে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও প্রশাসন মিলে বিষয়টির সুরাহা করব।
এ ব্যাপারে খুলনা সিভিল সার্জন ডা: সুজাত আহম্মেদ এর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, যারা পল্লী চিকিৎসক তারা মাত্র প্রাথমিক চিকিৎসাটা দিতে পারেন। তবে তাদের চেম্বার, ক্লিনিক বা কেয়ার হোম করে কোন যন্ত্রপাতি ব্যবহার করতে পারবেন না। তারা যা করছেন সম্পূর্ণ অবৈধ আমি অচিরেই তাদের বিরুদ্ধে অভিযানে নামবো।
Leave a Reply