হাকিকুল ইসলাম খোকন হযুক্তরাষ্ট্র প্রতিনিধি:
নিউইয়র্কে করোনা পরীক্ষার জন্য কেন্দ্রের বাইরে লাইনে দাঁড়িয়ে মানুষের অপেক্ষা
যুক্তরাষ্ট্রের করোনাভাইরাস সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউ ভয়াবহ হয়ে উঠেছে। প্রথম দফায় সংক্রমণ ও মৃত্যু দুই বিচারেই বিশ্বের সবচেয়ে আক্রান্ত দেশ ছিল যুক্তরাষ্ট্র। কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আসার পর এখন দ্বিতীয় দফায় এ হার ভয়াবহ পর্যায়ে গিয়ে পৌঁছেছে। নিউইয়র্ক নগরের ৪০টি জিপকোডে ৪ শতাংশের বেশি হারে করোনার সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ছে। এর মধ্যে স্ট্যাটেন আইল্যান্ড এলাকার অবস্থা খুবই নাজুক।
সংক্রমণের প্রকোপ অনুযায়ী বিভিন্ন রং দিয়ে এখন নিউইয়র্কের বিপজ্জনক এলাকাগুলো চিহ্নিত করা হচ্ছে। ২২ নভেম্বর রাজ্যের গভর্নর অ্যান্ড্রু কুমো বলেছেন, পুরো স্ট্যাটেন আইল্যান্ডের অবস্থা খারাপ হয়ে উঠছে। এ সপ্তাহের মধ্যেই পুরো এলাকা ইয়েলো জোন থেকে রেড জোনে চলে যেতে পারে। স্ট্যাটেন আইল্যান্ডের হাসপাতালে স্থান সংকুলান সমস্যা হতে পারে। এখনই উপচে পড়া ভিড় শুরু হয়ে গেছে।
নিউইয়র্ক নগরীর পাঁচ বরোর একটি স্ট্যাটেন আইল্যান্ড হঠাৎ করেই করোনা সংক্রমণের শীর্ষে চলে এসেছে। গত মার্চ থেকে নগরীতে ব্যাপক সংক্রমণের সময়েও স্ট্যাটেন আইল্যান্ড অন্যান্য বরো থেকে সংক্রমণের দিক থেকে পিছিয়ে ছিল।
নিউইয়র্কে এক সপ্তাহের গড় সংক্রমণের হার তিন শতাংশ অতিক্রম করলেই এলাকাটিকে ‘ইয়েলো জোন’ এবং গড় সংক্রমণের হার পাঁচ শতাংশ অব্যাহত থাকলে ‘রেড জোন’ হিসেবে ঘোষণা দেওয়া হয়। ১৩ নভেম্বর থেকে স্ট্যাটেন আইল্যান্ডের সংক্রমণের হার তিন শতাংশ ছাড়িয়ে গেছে। এ সপ্তাহেই তা পাঁচ শতাংশ অতিক্রম করবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
পুরো স্ট্যাটেন আইল্যান্ডের অবস্থা খারাপ হয়ে উঠছে। এ সপ্তাহের মধ্যেই পুরো এলাকা ইয়েলো জোন থেকে রেড জোনে চলে যেতে পারে
অ্যান্ড্রু কুমো, নিউইয়র্কের গভর্নর
করোনায় সবচেয়ে বেশি মানুষের মৃত্যুর দেশ যুক্তরাষ্ট্র। এর মধ্যে নিউইয়র্ক হচ্ছে সবচেয়ে বেশি মৃত্যুর নগরী। করোনার এই দ্বিতীয় ঢেউ প্রতিরোধে পুরো নগরী লকডাউনে না গেলেও সংক্রমিত এলাকাগুলোতে আবার সীমিত লকডাউন দিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করা হতে পারে বলে রাজ্য ও নগর কর্তৃপক্ষ আভাস দিয়েছে।
এদিকে নিউইয়র্কে সর্বত্র মাস্ক পরা ও সামাজিক ব্যবধান কঠোরভাবে মেনে চলার নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে। ১০ জনের বেশি মানুষ নিয়ে হাউস পার্টি না করারও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
নিউইয়র্কে এক সপ্তাহের গড় সংক্রমণের হার তিন শতাংশ অতিক্রম করলেই এলাকাটিকে ‘ইয়েলো জোন’ এবং গড় সংক্রমণের হার পাঁচ শতাংশ অব্যাহত থাকলে ‘রেড জোন’ হিসেবে ঘোষণা দেওয়া হয়
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বিপজ্জনক হয়ে ওঠার কারণে নিউইয়র্ক নগরের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ১৯ নভেম্বর থেকে আবার ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। ‘থ্যাংকস গিভিং ডে’ পর্যন্ত নগরের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এই ছুটি অব্যাহত থাকবে।
নিউইয়র্ক ডেইলি নিউজের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০ নভেম্বর নিউইয়র্ক সিটি হল থেকে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নিউইয়র্ক নগরের ৪০টি জিপকোড এলাকায় ৪ শতাংশের বেশি হারে করোনার সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ছে।
জনস হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্যমতে, করোনা মহামারি শুরুর পর থেকে এখন পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রে ২ লাখ ৫৫ হাজারের বেশি মানুষ কোভিড-১৯-এ মারা গেছে। নতুন এ করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হয়েছেন দেশটির ১ কোটি ২০ লাখের বেশি মানুষ। এর মধ্যে ২৮ লাখ সংক্রমণই হয়েছে চলতি নভেম্বর মাসে। অর্থাৎ, যুক্তরাষ্ট্রে এখন পর্যন্ত মোট করোনা সংক্রমণের প্রায় এক-চতুর্থাংশই হয়েছে এ মাসে। নভেম্বর মাস এখনো শেষ হয়নি।
Leave a Reply