চাঁদপুর সদরের শাহমাহমুদ ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ডের শাহাতলীতে পরিত্যক্ত ইটভাটায় হেলাল উদ্দিনের ভাবনায় চমক ছড়াচ্ছে রসালো দেশী বিদেশী নানাজাতের ফলের বাগান। অজপাড়াগাঁ এলাকার এমন বাগানে বিদেশী ফল ধরছে দেখে মানুষের মাঝে দারুন উৎসাহ যোগাচ্ছে। প্রতিদিনই বাগান দেখতে আসা এসব মানুষজনের মাঝে বাগানটি রীতিমতো হৈচৈ ফেলে দিয়েছে। দেশের মাটিতে তৈরি করা এই বিদেশী ফল বাগানটি প্রায় আড়াই একর জমিতে করা হয়েছে। ৩০শে নভেম্বর সোমবার সরজমিনে বাগানটিতে গেলে স্থানীয়রা জানায়, নানাজাতের দেশী বিদেশী ফল এই বাগানটিতে চাষাবাদ করা হচ্ছে।যারমধ্যে রয়েছে ৩ জাতের পারসিমন, লাল, হলুদ, পিংক, বেগুনি এবং গোল্ডেন ড্রাগন ফল, ব্লাড অরেঞ্জ, সিডলেস গ্রেপফ্রুট, বারোমাসি ভিয়েতনামী মাল্টা আর অরেঞ্জ, ৯ জাতের বিখ্যাত আম (অস্ট্রেলিয়ান হানিগোল্ড, আলফানসো, ব্যানানা/নামডকমাই, কাটিমন, কিং অব চাকাপাত, মিয়াজাকি জাতের রেড ম্যাংগো বা সূর্যডিম, আমেরিকান পালমার, ব্রাজেলিয়ান পারপল ম্যাংগো এবং থ্রি টেস্ট),দুই জাতের এভাকাডো, তিন জাতের স্ট্রবেরি এবং পবিত্র কোরানের ত্বীন ফল। এই চাষাবাদে জড়িত থাকা হানিফ, অজয়, মিন্টু নামের ৩ যুবক জানায়, ডাকাতিয়া নদীর তীর ঘেষা আশিক মাওলানা বাড়ীর এই জায়গাটিতে প্রায় ৬০ বছর যাবৎ ইটভাঁটা চলছিলো। যা ৪/৫ বছর আগে বন্ধ হয়ে যায়। পরবর্তীতে এই জায়গাটি বালু দিয়ে ভরাট করা হয়। আর এটির চারদিকে কাঁটা তারের বেড়া দিয়ে এখানে মাল্টা, ওয়াটার মিলন, ক্যাপসি ক্যাম, ড্রাগন, পেঁপে, আম, বরই চাষ শুরু করা হয়। যেগুলোর মধ্যে যত্ন নেওয়ায় ইতিমধ্যে ফল আসা শুরু করেছে। বাগানটির যত্ন নেওয়ার দায়িত্বে থাকা ফাহাদ জানায়, ক্যাপসি ক্যামের ৬টি বেড। যার প্রতিটি বেডে ১’শ ৩টি করে গাছ লাগানো হয়েছে।প্রতিটি বেড ১’শ ৩০ ফুট লম্বা ও আড়াই ফুট চওড়া। আর এর ফাঁকে ফাঁকে মাল্টা চাষ করা হচ্ছে। আবার ওয়াটার মিলনের ১টি বেডে ৯০টি করে চারা লাগানো হয়েছে। প্রতিটি গাছ দেড় ফুট দূরে দূরে। আমরা সম্পূর্ণভাবে কৃষি পরামর্শে বাগানটি তীল তীল করে সাজাচ্ছি। এ ব্যপারে শাহমাহমুদপুর ইউনিয়নের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. মনিরুজ্জামান জানান, বাগানটির সমৃদ্ধি ঘটাতে কেঁচো সারের ব্যবহারসহ সর্বাত্মক প্রযুক্তিগত সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। শাহমাহমুদ ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য শফিক কারী এবং ইউপি চেয়ারম্যান স্বপন মাহমুদ জানান, নীচু ও পরিত্যক্ত জমি ভরাট করে যেভাবে পরিবেশবান্ধব ফল চাষ শুরু হয়েছে। তা সত্যিই প্রশংসার দাবীদার। আমরা এমন উদ্যোগকে স্বাগত জানাচ্ছি এবং যেকোন প্রয়োজনে পাশে থাকার অঙ্গিকার করছি। এদিকে এই বাগানটির উদ্যোক্তা এবং সার্বিক তত্ত্বাবধানে থাকা হেলাল উদ্দিন জানান, আমি কৃষি পরিবারের সন্তান না হয়েও কৃষির প্রতি আমার প্রবল আগ্রহ। মোটা দাগে টাকা খরছ করে এই জমিতে ফলের বাগান তৈরির ঝুঁকি নিয়েছি। প্রায় ৬০ বছরের চলমান পরিবেশ দূষণকারী ইটভাটা ৪/৫ বছর পূর্বে স্ব উদ্যোগে বন্ধ করি।পরে এখন ওই জমিতে চালু করেছি সর্বাধুনিক প্রযুক্তির এগ্রো প্রজেক্ট। নাম দিয়েছি “ফ্রুটস ভ্যালী”। এই প্রকল্পে বিশ্বখ্যাত উন্নত জাতের বেশ কিছু ফলের বাণিজ্যিক চাষ চলছে। যা দেশে সম্ভবত এই প্রথম। এসব বিশ্বখ্যাত ফলের ফলন আসতে প্রায় দেড় বছর অপেক্ষা করতে হবে। তাই সাথী ফসল হিসেবে চাষ হচ্ছে, বিখ্যাত সাম্মাম/রকমেলন/মাস্কমেলনসহ তিন জাতের আনকমন তরমুজ। (উপরে হলুদ ভেতরে লাল, ডোরাকাটা সবুজ (লম্বা) ভেতরে গাঢ় হলুদ এবং ডোরাকাটা সবুজ (গোলাকার) ভেতরে সিডলেস হলুদ রং। সুখবর হচ্ছে প্রথমবারেই আশাতীত ফলন হয়েছে। আশা করছি দ্রুতই অর্গানিক এসব ফল বাজারজাত করতে পারবো। তিনি আরো জানান, অনলাইনে আগাম বুকিং দিলে সরাসরি বাগান থেকেও তাজা ফল সরবরাহ করা হবে। আমাদের লক্ষ্য থাকবে প্রকল্পের প্রথম ফলন থেকে নামমাত্র মূল্যে ক্রেতার কাছে তরতাজা গাছপাঁকা ফলন সরবরাহ করা। এরপরেই বাজারে আসবে স্ট্রবেরি। যা একইভাবে ফলন তোলার দিনই সরবরাহ করার চেষ্টা থাকবে। এ বিষয়টি জেলা কৃষি অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক জালাল উদ্দিনকে অবহিত করা হলে তিনি জানান, আমি মনে করি এই এগ্রো প্রকল্পটি হবে এদেশের একটি মডেল ফল উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান। যেখানে প্রথমবারের মতো এমন কিছু ফলের চাষ হচ্ছে। যা এতোদিন ছিলো অকল্পনীয়।দ্রুত এই বাগানটি পরিদর্শনে যাবো এবং উদ্যোগ সফল করতে সর্বাত্মক সহায়তা করবো।
প্রতিদিনের সময়/জা-বি
Leave a Reply