ফেরদৌস রনি (স্টাফ রির্পোটার)
সাতক্ষীরা জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি, সাবেক সংসদ সদস্য ও সাতক্ষীরা জেলা পরিষদের সাবেক প্রশাসক বীর মুক্তিযোদ্ধা মনসুর আহমেদের তৃতীয় জানাযা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন সম্পন্ন হয়েছে।
মঙ্গলবার (২ ফেব্রুয়ারি) দুপুর ২টায় সাতক্ষীরার শহীদ আব্দুর রাজ্জাক পার্কে তার প্রথম জানাযা অনুষ্ঠিত হয়।
জানাযায় হাজারো মানুষের ঢল নামে। প্রিয় নেতাকে শেষ বারের মতো এক নজর দেখার জন্য জেলার প্রত্যন্ত এলাকা থেকে দল মত নির্বিশেষে নেতা-কর্মীরা শহীদ আব্দুর রাজ্জাক পার্কে হাজির হন। এসময় প্রিয় নেতাকে হারিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন অনেকে। জানাযার আগে তার কফিন জাতীয় পতাকা দিয়ে আচ্ছাদন করে দেওয়া হয়।
পরে সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট এসএম মোস্তফা কামালের তত্ত্বাবধানে তাকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় গার্ড অব অনার প্রদান করা হয়।
পরে তার স্মৃতিচারণ ও গভীর শোক প্রকাশ করে মোবাইলের মাধ্যমে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রাখেন আওয়ামীলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য তোফায়েল আহমেদ।
এছাড়া জানাযায় অংশগ্রহণ করে বক্তব্য রাখেন সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের উপদেষ্টামন্ডলীর সদস্য ডা. রুহুল হক এমপি, সাতক্ষীরা-৪ আসনের সংসদ সদস্য এসএম জগলুল হায়দার, সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক এসএম মোস্তফা কামাল, পুলিশ সুপার মোস্তাফিজুর রহমান, জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম, জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার মোশারফ হোসেন মশু, রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে জেলা জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক আশরাফুজ্জামান আশু, জেলা আওয়ামীলীগের দপ্তর সম্পাদক শেখ হারুন-উর-রশীদ, মুনসুর আহমেদের পরিবারের বড় ছেলে গাজী সালাউদ্দিন প্রমূখ।
এছাড়াও জানাযায় অংশ নেন জেলা আওয়ামীলীগের সিনিঃ সহ সভাপতি সাবেক এমপি এ কে ফজলুল হক, জেলা বিএনপির আহবায়ক অ্যাড. সৈয়দ ইফতেখার আলী, জেলা ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি মহিবুল্লাহ মোড়ল, সাধারণ সম্পাদক এ্যাড. ফাহিমুল হক কিসলু, জেলা জাসদের সভাপতি ওবায়দুস সুলতান বাবলু, জেলা আওয়ামীলীগের সহ সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যক্ষ আবু আহমেদ, বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদুল ইসলাম, শেখ সায়িদউদ্দীন, যুগ্ম সম্পাদক ও সদর উপজেলা চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান বাবু, ফিরোজ কামাল শুভ্র, কালিগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান সাঈদ মেহেদী, শ্যামনগর উপজেলা চেয়ারম্যান আতাউল হক দোলন, তালা উপজেলা চেয়ারম্যান ঘোষ সনৎ কুমার, কলারোয়া উপজেলা চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম লাল্টু, দেবহাটা উপজেলা চেয়ারম্যান মুজিবর রহমান, সাতক্ষীরা পৌর মেয়র তাজকিন আহমেদ চিশতি, কলারোয়া পৌর মেয়র মনিরুজ্জামান বুলবুলসহ জেলা আওয়ামীলীগ, বিএনপি, ওয়ার্কার্স পার্টি, জাসদ, বাসদ এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক-সামাজিক-সাংস্কৃতিক-স্বেচ্ছাসেবী ও ক্রীড়া সংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দসহ হাজারো জনতা।
এর আগে বেলা ১২টায় সাতক্ষীরা জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মনসুর আহমেদের মরদেহ সাতক্ষীরার শহীদ আব্দুর রাজ্জাক পার্কে আনা হলে মুক্তিযোদ্ধা সংসদসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক-সামাজিক-সাংস্কৃতিক-স্বেচ্ছাসেবী ও ক্রীড়া সংগঠনের নেতাবৃন্দসহ তার কফিনে ফুলেল শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। তার ২য় জানাযা নলতা পাক রওজা শরীফে এবং তৃতীয় জানাযা মরহুমের পারুলিয়াস্থ বাসভবনে অনুষ্ঠিত হয়।
প্রসঙ্গত: সোমবার (১ ফেব্রুয়ারি) রাত ১১টা ০৫ মিনিটে রাজধানীর ঢাকার স্পেশালাইজড হাসপাতালে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭৩ বছর। তিনি কোভিড-১৯ করোনাক্রান্ত হয়ে সাতক্ষীরা সিভি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। গত ১২ জানুয়ারি সন্ধ্যা ৬টা ২০ মিনিটে সাতক্ষীরা স্টেডিয়াম থেকে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর একটি এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে তাকে ঢাকায় নেওয়া হয়। বীর মুক্তিযোদ্ধা মুনসুর আহমেদ ও তার ব্যক্তিগত গাড়িচালক আব্দুল মইন গত ২৮ ডিসেম্বর শারীরিক অসুস্থতা জনিতকারণে সাতক্ষীরার একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হন। পরে পরীক্ষায় তাদের করোনা শনাক্ত হয়। এরপর ১১ জানুয়ারি তাদের দু’জনেরই করোনা নেগেটিভ আসে। তবে, শারীরিক নানা জটিলতার কারণে পরিবারের ইচ্ছা অনুযায়ী উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতালে নেওয়া হয়। মুনসুর আহমেদ ১৯৪৮ সালে সাতক্ষীরার দেবহাটা উপজেলার পারুলিয়ায় জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম হামিজ উদ্দীন এবং মাতার নাম দেলজান বিবি। সাতক্ষীরা পিএন হাইস্কুল থেকে তিনি এসএসসি পাশ করেন এবং খুলনা কমার্স কলেজ থেকে তিনি স্নাতক পাশ করেন। ছাত্রজীবন থেকেই তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শের সৈনিক হিসেবে বিভিন্ন আন্দোলন সংগ্রামে যুক্ত ছিলেন। বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবনে সাতক্ষীরার গণমানুষের অধিকার ও উন্নয়নে তার অবদান অপরিসীম। কৃষক শ্রমিক ছাত্র আন্দোলনে তার নেতৃত্বে বারবার কেঁপেছে রাজপথ। তিনি ছিলেন সাতক্ষীরার রাজনৈতিক অঙ্গনের অভিভাবক। তিনি দীর্ঘদিন পারুলিয়া ইউপির চেয়ারম্যান ছিলেন। এরপর তৎকালীন সাতক্ষীরা-০৪ (দেবহাটা-কালিগঞ্জ) আসনের সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এছাড়া তিনি সাতক্ষীরা জেলা পরিষদ প্রশাসক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। তিনি সাতক্ষীরার স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা, এতিমখানা, হাসপাতাল, স্বাস্থ্যকেন্দ্র, ক্লাবসহ বিভিন্ন সামাজিক প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা ও সংস্কারে ব্যাপক ভূমিকা রেখেছেন। ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসারে তিনি ভূমিকা রেখেছেন।
জানা গেছে, ১৯৮০ সালে সাতক্ষীরা জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন মুনসুর আহমেদ। ১৯৮০ থেকে ১৯৯৮ পর্যন্ত টানা ১৯ বছর জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক ছিলেন তিনি।
এরপর ২০১৫ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি সম্মেলনের মাধ্যমে কেন্দ্রীয় নেতারা জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি হিসেবে মুনসুর আহমেদের নাম ঘোষণা করেন। ২০১৬ সালের ২১ মার্চ এ কমিটির অনুমোদন দেওয়া হয়। সর্বশেষ ২০১৯ সালের ১২ ডিসেম্বর বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ সাতক্ষীরা জেলা শাখার ত্রি-বার্ষিক কাউন্সিলে পুনরায় মুনসুর আহমেদকে সভাপতি নির্বাচিত করা হয়।
Leave a Reply