মোঃ সুজন আলী, ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি :- দূর থেকে দেখতে ঠিক বটগাছের মতই। কিন্তু এটি কোন বটগাছ নয়। ঠাকুরগাঁওয়ে প্রায় দুইবিঘা জমি জুড়ে বিস্তৃত রয়েছে ২২০ বছরের পুরনো একটি সূর্যপুরী আমগাছ। বিশালাকৃতির এই গাছটিকে এশিয়া মহাদেশের সবচেয়ে বড় আমগাছ হিসেবে ধরা হয়। প্রতিনিয়তই দেশ-বিদেশের বিভিন্ন পর্যটক একনজর এই আমগাছটিকে দেখার জন্য ভিড় করে।
ব্যতিক্রমী এই সূর্যপুরী আমগাছটির অবস্থান ঠাকুরগাঁও জেলার বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার আমজানখোর ইউনিয়নের হরিণমারী সীমান্তের মন্ডুমালা গ্রামে।
ঠাকুরগাঁও জেলায় ঐতিহ্যবাহী অনেক স্থাপনা রয়েছে। এরমধ্যে ঐতিহ্যবাহী বালিয়াডাঙ্গীর এই সূর্যপুরী আমগাছটি বিস্ময় হয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে। গাছের মূল থেকে ডালপালাকে আলাদা করে দেখতে চাইলে রীতিমত ভাবতে হয়।
জানা যায়, ঠাকুরগাঁওয়ের মানুষের প্রিয় একটি আম সূর্য্যপুরী। এর চাহিদা রয়েছে পুরো দেশজুড়ে। সুস্বাদু, সুগন্ধী, রসালো আর ছোট আটি সূর্যপুরী আম জাতটির অন্যতম বৈশিষ্ট্য। বালিয়াডাঙ্গীর বিশালাকৃতির আমগাছটি ৭৪ শতাংশ জমির উপরে অর্থাৎ প্রায় দুই বিঘারও বেশি জায়গা জুড়ে বিস্তৃত।
গাছটির উচ্চতা আনুমানিক ৮০ থেকে ৯০ ফুট। এর পরিধিও ৩৫ ফুটের কম নয়। মূল গাছের তিন দিকে অক্টোপাসের মত মাটি আঁকড়ে ধরেছে ১৯টি মোটা মোটা ডালপালা। বয়সের ভারে গাছের ডালপালা নুয়ে পড়লেও গাছটির শীর্ষভাগে সবুজের সমারোহ, আমের সময় সবুজ আমে টইটম্বুর থাকে এই গাছটি। আমগুলোর ওজনও হয় প্রতিটি ২০০ গ্রাম থেকে ২৫০ গ্রাম। এবারও গাছটিতল ব্যাপক মূল ধরেছে। প্রকৃতির আপন খেয়ালে বেড়ে উঠে সূর্য্যপুরী আমগাছটি আজ ইতিহাস হয়ে দাঁড়িয়ে আছে এই গাছটি।
জুনাইদ কবির বলেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেক দিন ধরেই দেখছি এশিয়া মহাদেশের সবচেয়ে বড় আমগাছটি বালিয়াডাঙ্গীতে। তাই আজ স্বচোখে দেখার জন্যই এখানে আসা। সত্যিই আমগাছটি নিজ চোখে না দেখলে বোঝার উপায় নেই এর বিশালতা।
পঞ্চগড় থেকে আসা শিক্ষক নজরুল ইসলাম বলেন, স্ত্রী ও দুই সন্তানকে নিয়ে আমগাছটি দেখতে এসেছি। গাছটি দেখে মুগ্ধ হয়ে গেলাম। এর ডালপালা লতার মত চারদিকে ছড়িয়ে রয়েছে।
বগুরা থেকে আসা গৃহবধু ইসরাত জাহান বলেন, এর আগে কখনো এত্ত বড় আম গাছ দেখিনি। প্রায় দুই বিঘারও বেশি জায়গায় জুড়ে গাছটি। যে কেউ একনজর দেখলে মন জুড়িয়ে যাবে। এটি সংরক্ষণ করা দরকার এবং এই স্থানটিকে পিকনিক স্পট হিসেবে গড়ে তোলা দরকার।
গাছটির মালিক নূর ইসলাম বলেন, বিশালাকৃতির এই আম গাছটি তার দাদার বাবা রোপন করেছিল। প্রকৃতির আপন খেয়ালে বেড়ে উঠে আমগাছটি। ৭৪ শতক জমি জুড়ে এটি বিস্তৃত। প্রতিদিন বিভিন্ন জায়গা থেকে পর্যটক এসে ভিড় করে। গত বছর প্রায় এক লক্ষ টাকার আম বিক্রি করা হয়েছিল। এবারও প্রচুর মূকূল ধরেছে, আশাকরি এবার লক্ষাধিক টাকার আম বিক্রি হবে।
সরকারি ভাবে সহযোগিতা করা হলে এই গাছটিকে ঘিরে একটি পিকনিক স্পট করা সম্ভব বলে জানান গাছটির মালিক নূর ইসলাম।
ঠাকুরগাঁও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোঃ সিরাজুল ইসলাম বলেন, ঠাকুরগাঁওয়ে এই আমগাছটি এশিয়া মহাদেশের মধ্যে সবথেকে বড় সূর্যপুরী আমগাছ। গাছটি রক্ষণাবেক্ষণ করার জন্য আমরা সার্বক্ষণিকভাবে তদারকি করি। যারা এখনো এটি দেখননি তাদের বলতে চাই- একবারও হলেও চলে আসুন গাছটি দেখার জন্য।
ঠাকুরগাঁওয়ের জেলা প্রশাসক মো. মাহবুবুর রহমান বলেন, গাছটি যদিও ব্যক্তিমালিকানাধীন হলেও ইতিমধ্যে পর্যটকদের সাময়িক বিশ্রামের জন্য ও খাবারের জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। এছাড়াও ব্যক্তি উদ্যোগে কেউ রেস্টুরেন্ট ও রেস্ট হাউজ করতে চাইলে সেটাকেও প্রধান্য দেওয়া হবে।
Leave a Reply