আতাউর শাহ্, নওগাঁ প্রতিনিধিঃ
নওগাঁর মহাদেবপুরের আত্রাই নদী মধুবন এলাকায় আসা অতিথি পাখিদের রক্ষায় প্রতি বছরের মতাে কাজ শুরু করেছেন স্থানীয় প্রাণী ও প্রকৃতি সংগঠন। অতিথি পাখিদের বিচরণ করা আত্রাই নদী লীজ না দেওয়া ওই অংশ থেকে লাখ লাখ টাকার অবৈধ্যভাবে বালু উত্তােলন করে চলছেন। স্থানীয়দের দাবিতে প্রশাসন মধুবন এলাকায় সরকারের ঘােষিত মৎস্য অভয়াশ্রম ও পাখি কলোনি বালু মহল লীজ বন্ধ রাখে। তারপরও প্রশাসনের নাকের ডগায় একটি প্রভাবশালী চক্র ড্রেজার মশিনের মাধ্যমে অবৈধ্যভাবে দিনরাত বালু উত্তােলন করছে। এর প্রতিবাদ করলেই পুলিশ প্রশাসনের মাধ্যমে হয়রানি করা হয় বলে অভিযােগ করেন স্থানীয়রা। বালু উত্তােলনসহ দ্রুত প্রয়ােজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানানাে হয়েছে।
জানা গেছে, গত ১০/১২ বছর থেকে সাইবেরিয়া, মঙ্গলিয়াসহ শীত প্রধান দেশ থেকে নওগাঁর মহাদেবপুর উপজেলার আত্রাই নদীর মধুবন, কুঞ্জবনসহ কয়েকটি এলাকায় প্রায় তিন কিলামিটার এলাকা জুড়ে সড়ালি, পানকড়ি, ডুবরিসহ বিভিন্ন প্রজাতির হাজার হাজার অতিথি পাখি এসে বিচরণ করে। এসব পাখিদের রক্ষায় স্থানীয় প্রাণ ও প্রকৃতি সংগঠনসহ স্থানীয়রা কাজ করে আসছে। এসব এলাকা পাখিদের অভয়াশ্রমের জন্য প্রশাসনের কাছে ওই এলাকার বালু মহল লীজ বন্ধের দাবি জানিয়ে আসছেন সংগঠনের নেতৃবৃন্দ। এই দাবির অংশ হিসেবে চলতি বছর প্রশাসন লীজ না দিলেও প্রশাসনের নাকের ডগায় একটি প্রভাবশালী মহল ড্রেজার মেশিন দিয়ে নামে অবৈধ্যভাবে বালু উত্তােলন করে আসছিল। গত কয়কদিন আগে উপজেলা প্রশাসন থেকে ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করে বালু উত্তালন বন্ধের নির্দেশ দেন।
প্রাণ ও প্রকৃতি সংগঠনের সভাপতি কাজি নাজমুল হক জানান, সাঈদ হাসান শাকিল নদীর অন্য অংশ লীজ নিয়েছেন। সরকারি ভাবে মধুবন এলাকায় লীজ না দিলেও সাঈদ হাসান শাকিল ও তার পার্টানার মােয়াজ্জিম হাজিসহ একটি প্রভাবশালী মহলের যােগসাজশে পুলিশের সহযাগিতায় স্থানীয়দের ভয়ভীতি দিয়ে বালু উত্তােলন অব্যাহত রেখেছে। এর প্রতিবাদ করল থানা পুলিশের সহযাগিতায় থানায় ডেকে নিয়ে স্থানীয়দের ভয়ভীতি দেন। এতে অনেকেই এর প্রতিবাদ জানাতে সাহস পান না।
স্থানীয় মিজানুর রহমান জানান, পাখিদের ঢিল ছুড়ে তাড়িয়ে দিয়ে দীর্ঘ দিন ধরে উপেজলা প্রশাসন ও থানা সংলগ্ন এই পাখি কলনি থেকে বালু দস্যুরা অবৈধ্যভাবে বালু উত্তােলন করে যাচ্ছে। কিন্তু প্রশাসন নীরবভমিকা পালন করছে।
শামছুউদ্দিন মন্ডল হান্নান জানান, বাঁশ দিয়ে পাখি কলনি করা হয়েছে সেই অংশটি উপজেলা মৎস্য অফিস থেকে ঘােষিত মাছের অভয়আশ্রম। এখানেই পাখি এসে বসে প্রতি বছর। তারপরও উক্ত মহল অবৈধ্যভাবে ওই প্রভাবশালীরা লাখ লাখ টাকার বালু উত্তােলন করে আসছে।
সংগঠনের সদস্য মুনছুর সরকার জানান, প্রতি বছর আত্রাই নদীর ওই এলাকায় অবৈধ্যভাবে ড্রেজার মেশিনের মাধ্যমে বালু উত্তােলন করায় জমিগুলাে নদীর মধ্যে বিলিন হয়ে যাচ্ছে অন্যদিকে পাখিদের বিচরণ অসুবিধা হচ্ছে, পাখিদের ঢিল ছুড়ে তাড়িয়ে দেন উত্তালনকারিরা। প্রশাসন ও রাজনৈতিক মহলের যােগসাজশে অবৈধ্য ভাবে দীর্ঘ দিন থেকে ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু উত্তালন করছেন। তাদের সংগঠন ও স্থানীয়রা দ্রুত এই অবৈধ্য বালু উত্তােলন বন্ধ প্রশাসনের কাছে দাবি জানিয়ে আসছে ও কার্যকরি তেমন কাজ হচ্ছেনা।
প্রশাসনের বালু উত্তােলন বন্ধের নির্দেশ দিয়েছেন। তারপরও বালু উত্তোলন কিভাবে ও পাখি তাড়ানার দেওয়া হচ্ছে এমন প্রশ্নে, পাখি তাড়ানার অভিযােগ অস্বীকার করে ঠিকাদার সাঈদ হাসান শাকিলের ম্যানেজার কায়েম উদ্দিন জানান, এসব কিছুই আমার জানা নেই, সব কিছু জানেন এক নম্বর ঠিকাদার।
মূল ঠিকাদার সাঈদ হাসান শাকিল জানান, মূলত বালু ব্যবসা যখন তার পার্টনার মােয়াজ্জিম হাজি। লীজ নেওয়া অংশ ছাড়া যদি অন্য স্থান থেকে বালু উত্তােলন করে থাকে তার সাথে কথা বলে অবৈধ্য বালু উত্তােলন বন্ধ করা হবে। ঠিকাদার সাঈদ হাসান শাকিলের পার্টনার মােয়াজ্জিম হাজি স্থানীয়দের অভিযােগ অস্বীকার করে বলেন, তারা দীর্ঘ দিন থেকে ওই অংশ হতে বালু উত্তােলন করে আসছেন। হঠাৎ করে শত্রুতামূলক পাখি কলনি ঘােষণা করা হয়েছে।
মহাদেপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) নজরুল ইসলাম জুয়েল জানান, পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযােগকারিদের অভিযােগ সত্য নয়।
মহাদেবপুর উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা একেএম জামান জানান, মাছ রক্ষায় ওই অংশকে মৎস্য অভয়াশ্রম ঘােষণা করা হয়েছে। প্রশাসনের নির্দেশ অমান্য করে যদি আবারও বালু করা হচ্ছ তা জানা নেই।
মহাদেবপুর উপজেলার সহকারি কর্মকর্তা (ভমি) আসমা খাতুন জানান, গত কয়েকদিন আগে সেখানে উপজেলা প্রশাসনের নির্দেশে ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করা হয়েছিল এবং লীজ বহিরভূত ওই অংশ থেকে বালু উত্তােলন না করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আবার বালু উত্তােলন করা হলে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
মহাদেবপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মিজানুর রহমান জানান, ওই এলাকায় বালু উত্তােলনর সুযােগ নেই। তারপরও ওই এলাকা থেকে বালু উত্তােলনের কেউ অভিযােগ করেননি। অভিযােগ করলে প্রয়ােজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।#
Leave a Reply