
রাজশাহী প্রতিনিধি: ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের চতুর্থ ধাপে অনুষ্ঠিত রাজশাহীর বাঘা উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ভোট গণনায় কারচুপির অভিযোগ এনে ঘোষিত ফলাফল প্রত্যাখ্যান এবং সকল কেন্দ্রের ভোট পুনঃগণনার দাবি জানিয়েছেন আনারস প্রতিকের চেয়ারম্যান প্রার্থী মোঃ রোকনুজ্জামান রিন্টু।
বৃহস্পতিবার (৬ জুন) সন্ধ্যায় নগরীর একটি রেস্টুরেন্টে সংবাদ সম্মেলন করে প্রার্থী রোকনুজ্জামান রিন্টু এই দাবি জানান। তিনি নির্বাচন কমিশনের সচিব বারবর এ বিষয়ে দাখিলকৃত একটি অভিযোগের কপি সংবাদ সম্মেলনে পড়ে শোনান।
উল্লেখ্য, বেসরকারিভাবে ঘোষিত নির্বাচনী ফলাফলে ৩২ হাজার ৪০৫ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন মোটরসাইকেল প্রতিকের প্রার্থী এ্যাডভোকেট লায়েব উদ্দিন লাভলু। আর আনারস প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থী রোকনুজ্জামান রিন্টু পেয়েছেন ৩২ হাজার ২৯৯ ভোট। উভয়ের ভোটের পার্থক্য মাত্র ১০৬টি।
সংবাদ সম্মেলনে রোকনুজ্জামান বলেন, অন্তত ১৮ থেকে ২০টি কেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসারগণ তার নিয়োজিত সকল নির্বাচনী পোলিং এজেন্টকে কেন্দ্র থেকে বের করে দিয়ে নিজেদের ইচ্ছামত ভোট গণনা করেন এবং পোলিং এজেন্টদের কেন্দ্র ভিত্তিক ফলাফলের শীট সরবরাহ না করেই ফলাফল ঘোষণা কেন্দ্রে প্রেরণ করেন। এ কারণে কেন্দ্র ভিত্তিক ফলাফল শীটে তার নির্বাচনী পোলিং এজেন্টদের কারও স্বাক্ষর নেওয়া হয় নাই। এছাড়াও অনেক কেন্দ্র থেকে তার পোলিং এজেন্টদের মৌখিকভাবে জানানো ফলাফল ও সহকারী রিটানিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে প্রেরিত ফলাফলের মধ্যে ব্যাপক অসামঞ্জস্য ও গড়মিল দেখা যায়।
তিনি আরও বলেন, অধিকাংশ কেন্দ্রে আমার বৈধ ভোট বাতিল বলিয়া ঘোষণা করা হয়। অনুরূপ ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যানের ক্ষেত্রেও নির্ধারিত ফলাফলের সাথে বাতিল ভোটের অসামঞ্জস্য ও গরমিল দেখা যায়। প্রদত্ত মোট ভোটের উপস্থিতি চেয়ারম্যান পদে ৪০.০৪%, ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৩৯.৯০% এবং মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৩৯.৯৮% দেখানো হয়। যা ভোট গণনায় অনিয়মের ঈঙ্গিত বহন করে।
সংবাদ সম্মেলনে তিনি আরও বলেন, চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান তিন পদেরই বাতিলকৃত ভোটের পার্থক্য দেখানো হয়েছে। এতে প্রমাণিত হয় যে, বাঘা উপজেলা পরিষদ নির্বাচন-২৪ প্রশ্নবিদ্ধ করতে ভোট গণনায় অনিয়ম করা হয়। সার্বিক বিষয় বিশ্লেষণ করে তিনি নিশ্চিত যে, প্রতিদ্বন্দি প্রার্থীকে বিজয়ী করতেই গণনার ক্ষেত্রে নির্বাচনী কাজে নিয়োজিত কিছু ব্যক্তিবর্গ কারচুপির আশ্রয় নিয়েছেন।
সংবাদ সম্মেলনে তিনি জনগণের ভোট পেলেও বাঘা উপজেলার কৃষি, আনসার ভিডিপি, বিআরডিবি, থানা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসের একাডেমিক সুপারভাইজার যোগসাজস করে নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে তাকে পরাজিত দেখিয়েছেন বলে কান্নায় ভেঙে পড়েন।
সংবাদ সম্মেলনে মো. রোকনুজ্জামান রিন্টু দাবি করেন, চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও নারী ভাইস চেয়ারম্যান এই তিনটি পদে একত্রে অভিন্ন ব্যালটে নির্বাচন হলেও তিন পদে মোট প্রদত্ত (কাস্টিং) ভোটের সংখ্যা ও ভোটের হার এক নয়, তিন রকম। অথচ নির্বাচন কমিশনের নিয়মানুযায়ী তিন পদের প্রার্থীদের প্রাপ্ত ভোটের সংখ্যা অভিন্ন হতে পারে, তবে সকল পদে ভোটারদের প্রদত্ত (কাস্টিং) ভোটের সংখ্যা একত্রে সমান হবে।
তিনি দাবি করেন, অনিয়মে জড়িত কর্মকর্তারা হলেন, বাঘা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সুলতান শফিউল্লাহ জনি, আনসার ভিডিপি কর্মকর্তা মিলন দাস, বিআরডিবি কর্মকর্তা ইমরান আলী, উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আ.ফ.ম হাসান ও মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসের একাডেমিক সুুপারভাইজার মাহমুদুল হাসান খান।
সংবাদ সম্মেলনে বাঘা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল ইসলাম বাবুল, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম মন্টু, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ওয়াহেদ সাদেক কবির এবং বাঘা পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মামুন হোসেন উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে সংবাদ সম্মেলনে উত্থাপিত অভিযোগের বিষয়ে উল্লিখিত কর্মকর্তাদের মতামত জানার জন্য তাদের সাথে মোবাইলে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। কিন্তু তাদের কাউকে মোবাইলে পাওয়া যায়নি।
Like this:
Like Loading...
Leave a Reply