প্রবাসী ডেস্কঃ
চিরনিদ্রায় শায়িত হলেন আমেরিকায় বসবাসরত বাংলাদেশী কমিউনিটির প্রিয় মুখ ও মানবতার ফেরিওয়ালা নিউইয়র্কের ‘কামাল ভাই’। শুক্রবার (১০ এপ্রিল) স্থানীয় সময় সকাল ১০টায় জানাযার নামাজ শেষে লং আইল্যান্ড ওয়াশিংটন মেমোরিয়াল পার্কে নিজের কেনা কবরে তাকে সমাহিত করা হয়। জানাযার নামাজে ইমামতি করেন নিউইয়র্কে মোহাম্মদী সেন্টারের প্রতিষ্ঠাতা ইমাম কাজী কাইয়ুম। মরহুমের জানাযায় তার নিকটাত্মীয়রা অংশ নেন।
এর আগে প্রবাসী বাংলাদেশিদের এই অকৃত্রিম বন্ধু কামাল আহমদ নোবেল করোনাভাইরাসে (কোভিড-১৯) আক্রান্ত হয়ে গত রোববার (৫ এপ্রিল) ভোর সাড়ে ৪টার দিকে নিউইয়র্কের আলমাস্ট হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। কমিউনিটির এই বিশিষ্ট নেতা সপরিবারে নিউইয়র্কের এলমহার্স্ট এলাকায় থাকতেন। তিনি এক ছেলে এবং এক মেয়ের জনক ছিলেন।
নিউইয়র্কের বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশিদের সুখ-দুঃখে সবসময় সবার আগে যে মানুষটিকে পাওয়া যেত তিনি ছিলেন সর্বজন শ্রদ্ধেয় পরিচিতমুখ বিয়ানীবাজারের কৃতিসন্তান কামাল আহমেদ। দীর্ঘ ৪০ বছর ধরে মানবসেবায় নিজের সকল স্বার্থকে জলাঞ্জলি দিয়ে প্রবাসীদের কাছে একজন ‘কামাল ভাই’ হয়ে উঠেছিলেন । নিউইয়র্কের বিভিন্ন সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠনের সম্পৃক্ত থেকে প্রবাসীদের দাবি আদায়সহ সবসময় তাদের পাশে থেকে প্রবাসীদের কল্যাণে কাজ করে গেছেন তিনি। তাঁর মৃত্যুতে অনেক বেশি ক্ষতি হয়ে গেলো যুক্তরাষ্ট্রের বাংলাদেশীদের।
কামাল আহমদ মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী বাংলাদেশীদের সর্ববৃহৎ সামাজিক সংগঠন বাংলাদেশ সোসাইটির সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। এবি মিডিয়া গ্রুপের পরিচালক হিসেবে মিডিয়া অঙ্গনেও যুক্ত ছিলেন কামাল আহমদ। তিনি বাংলাদেশ বিয়ানীবাজার সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সমিতির সাবেক সভাপতি এবং বর্তমান উপদেষ্টা পরিষদের অন্যতম সদস্য ছিলেন। এছাড়াও তিনি জালালাবাদ এসোসিয়েশনের সভাপতি হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন। তার প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সহযোগিতায় এবং অর্থায়নে অসংখ্য মসজিদ মাদ্রাসাসহ বিভিন্ন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে দেশ ও প্রবাসে। মানবতার সেবায় নিজেকে যুক্ত এ মানুষটি দেশেও রাজনীতিসহ বিভিন্ন সামাজিক কাজের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।
রাজনৈতিক অঙ্গনেও কামাল আহমদের ভূমিকা ছিল অবিস্মরণীয়। তিনি ছিলেন নিউইয়র্ক ষ্টেট আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি। ছাত্রাবস্থায় ১৯৬৮ সালে বিয়ানীবাজার সরকারী কলেজের প্রতিষ্ঠাতা ব্যাচের ছাত্র ছিলেন কামাল আহমদ। তিনি ছিলেন একজন নিভৃতচারী, নিরহংকারী ও প্রচারবিমুখ সমাজসেবক। ১৯৬৮ সালে কামাল আহমদ ছিলেন বিয়ানীবাজার সরকারী কলেজের ছাত্রলীগের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা। উদ্যমী ছাত্রকর্মী হিসেবে নেতৃবৃন্দ তাঁকে কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি পদে নিযুক্ত করতে চাইলেও তিনি তা গ্রহণ করেননি। বিয়ানীবাজারে শহীদ মনু মিয়া স্মৃতিস্তম্ভ প্রতিষ্ঠায় তিনি অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। লাউতা উচ্চ বিদ্যালয় ও বাউরভাগ আদর্শ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের উন্নয়নে তিনি অনন্য ভূমিকা পালন করেছেন।।
তাঁর বাড়ি বিয়ানীবাজার উপজেলার লাউতা ইউনিয়নের বাউরভাগ গ্রামে। তাঁর পিতা বিশিষ্ট সমাজসেবক মরহুম জিয়া উদ্দিন আহমদ দীর্ঘদিন লাউতা ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য ছিলেন। ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে কামাল আহমদের পরিবার পাকবাহিনীর নির্যাতনের শিকার হয়েছিলেন।
দেশ-বিদেশের মানুষের কাছে স্বজ্জন ব্যক্তিত্ব হিসেবে পরিচিত ছিলেন কামাল আহমদ। তাঁর মৃত্যুর খবরে দেশের রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনে শোকের ছায়া নেমে আসে। ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তাঁর ছবি পোস্ট করে অনেকেই শোক বাণী, শ্রদ্ধা, স্মৃতিচারণ ও তাঁর পরিবারের প্রতি সমবেদনা প্রকাশ করেছেন।
Leave a Reply