আব্দুর রউফ রুবেল, নিজস্ব প্রতিবেদকঃ
গাজীপুর মহানগরীর কোনাবাড়ীতে পিতার থাপ্পরের প্রতিশোধ নিতে শিশু আলিফ(৫)কে অপহরণ করে হত্যায় জড়িত সাগর(১৯) নামের একজনকে আটক করেছে র্যাব-১।
শনিবার( ০২ মে)রাত সাড়ে এগারোটার দিকে র্যাব-১ গাজীপুর মহানগরীর পূবাইল রেল লাইন এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে সাগর কে আটক করে।
নিহত মোঃ আলিফ হোসেন(৫) গাজীপুর মহানগরীর পারিজাত আমতলা এলাকার মোঃ ফরহাদ হোসেনের ছেলে।
আটককৃত আসামি সাগর (১৯) নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ থানার রফিকউল্লাহর ছেলে।সে মহানগরীর কোনাবাড়ী পারিজাত (নিহতের বাড়ির ভাড়াটিয়া) এলাকায় ভাড়া থাকতো।
ঘটনাসুত্রে জানা যায়, গত ২৯ এপ্রিল বিকাল চারটার দিকে গাজীপুর মহানগরীর কোনাবাড়ী পারিজাত এলাকার মোঃ ফরহাদ হোসেন এর শিশু সন্তান মোঃ আলিফ হোসেন তার নিজ বাসা হতে নিখোঁজ হয়। নির্খোঁজের পর তার পরিবার সম্ভাব্য সকল স্থানে খোঁজাখোজি করে না পেয়ে কোনাবাড়ী থানায় একটি নিখোঁজ ডায়েরী করে। নিখোঁজের পরদিন নিহতের বাবার মোবাইল ফোনে অজ্ঞাত নাম্বার থেকে ফোন আসে এবং তার শিশু সন্তান মোঃ আলিফকে তারা অপহরণ করেছে বলে জানায় এবং তার মুক্তিপণ হিসেবে ২০ লক্ষ টাকা দাবি করে।
র্যাব জানায়, পোড়াবাড়ী ক্যাম্পের একটি আভিযানিক দল গোপন সংবাদের ভিত্তিতে গাজীপুর মহানগরীর পূবাইল রেল লাইন এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে অপহরণকারী দলের অন্যতম মূলহোতা সাগর কে গ্রেপ্তার করে। পরে আসামীর দেয়া তথ্যমতে গাজীপুর মহানগরীর কোনাবাড়ী এলাকায় তাদের ভাড়াকৃত ৩তলা একটি ফ্ল্যাটের একটি ঝুটের গুদাম এর ভিতর থেকে নিহত আলিফ এর অর্ধগলিত মৃত দেহ একটি প্লাষ্টিকের বস্তার ভিতর থেকে উদ্ধার করে।
র্যাবের জিজ্ঞাসাবাদে আটক আসামি সাগর জানায়,সাগর পেশায় একজন গার্মেন্টস কর্মী। তারা তিন বন্ধু মিলে একই রুমে গত ৬ মাস যাবৎ নিহতের বাড়ির ৩য় তলার ফ্লাটে বাসা ভাড়া থেকে গার্মেন্টসে চাকুরী করে আসছে। গত এক সপ্তাহ আগে উচ্ছৃঙ্খল জীবনযাপন করায় বাসার মালিক নিহতের বাবা আসামির বন্ধু ও রুমমেট জুয়েল আহমেদ সবুজকে ভবনের ছাদে উঠে মেয়েদের ডির্স্টাব করার কারণে কয়েকটি চড়-থাপ্পর দেন। এই থাপ্পরকে কেন্দ্র করে ও দ্রুত ধনী হওয়ার স্বপ্নে বাড়ির মালিকের প্রতি ক্ষোভ থেকে প্রতিশোধ নিতে সাগর এবং তার বন্ধু পলাতক আসামি জুয়েল আহমেদ সবুজ মিলে আলিফকে হত্যা করে লাশ গুম করে। এবং পরে অপহরণের নাটক সাজিয়ে নিহতের বাবা অর্থাৎ বাড়ির মালিকের কাছ থেকে ২০ লক্ষ টাকা আদায় করে তারা তাদের ধনী হওয়ার স্বপ্ন পূরণ করবে।
আসামি সাগর আরো জানায়, সে এবং তার বন্ধু জুয়েল আহমেদ সবুজ মিলে গত ২৯ এপ্রিল তারিখ বিকাল চারটার দিকে পরিবারের সকলের দৃষ্টির আড়ালে বাসা থেকে আলিফ কে ডেকে নিয়ে আসে। এবং খেলার ছলে তাকে ছাদে নিয়ে যায়। প্রথমে পলাতক আসামি জুয়েল আহমেদ সবুজ গলা টিপে ধরে এবং ধৃত আসামি সাগর ভিকটিমের মুখ চেপে ধরে শ্বাসরোধ করে হত্যা নিশ্চিত হওয়ার পর লাশটি একটি প্লাষ্টিকের বস্তার ভিতর করে তাদের ভাড়াকৃত বাসার পাশের রুমে ঝুটের গুদামের ভিতর রেখে দেয়। পরে তারা দুই জন উক্ত বাসায় রাত্রি যাপন করে পর দিন সকালে স্বাভাবিক ভাবে বাসা থেকে বের হয়ে ঢাকায় চলে যায় এবং বিভিন্ন মোবাইল ফোন ব্যবহার করে মুক্তিপন হিসেবে ২০ লক্ষ টাকা দাবি করে।টাকা না দিলে আলিফকে হত্যা করে লাশ গুম করে ফেলবে বলে হুমকি প্রদান করে।আসামিকে আটকের পর র্যাবের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ধৃত আসামি সাগর উক্ত খুনের ঘটনার সরাসরি জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে এবং তার দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে মোঃ আলিফের অর্ধগলিত মৃত দেহ উদ্ধার করা হয়।
র্যাবের জিজ্ঞাসাবাদে আটক আসামি সাগর আরো জানায়, এই অপহরণ ও হত্যাকান্ডের মূল পরিকল্পনাকারী জুয়েল আহমেদ সবুজ একজন অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী। এই অপহরণ ও হত্যাকান্ডের মাধ্যেমে নিজেকে শীর্ষ সন্ত্রাসী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য এই পরিকল্পনা করেছিল বলে স্বীকার করে।
এই হত্যাকান্ডের মূলহোতা পলাতক আসামিদেরকে গ্রেপ্তারের লক্ষে র্যাবের অভিযান অব্যাহত আছে।
Leave a Reply