ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি : দীর্ঘদিন ধরে কয়েকটি পরিবারের বিরোধ বাড়িতে প্রবেশের জন্য পায়ে হাঁটার ছোট একটি রাস্তা নিয়ে। বিষয়টি নিয়ে স্থানীয়ভাবে একাধিকবার চেয়ারম্যান ও মেম্বার সালিস বৈঠক করলেও কোনো সমাধান হয়নি। একপক্ষ মানলেও, অন্যপক্ষ কোনোভাবে ছাড় দিতে রাজি নয়।
এ ঘটনায় বিরক্ত ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার ৯নং রায়পুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম। ঘটনাটি ওই ইউনিয়নের দেহন-জজপাড়া এলাকার।
সম্প্রতি বাড়িতে প্রবেশের রাস্তা বাঁশ দিয়ে বন্ধ করে দেন প্রতিবেশী ফইজুল ইসলাম ও তার পরিবারের লোকজন। এতে বাড়িতে প্রবেশ ও বের হওয়া বন্ধ হয়ে যায় অপরপক্ষ নইম উদ্দিনসহ কয়েকটি পরিবারের। তারা সবাই একই বংশের আত্মীয়-স্বজন।
এ ঘটনায় নইম উদ্দিন ছেলে আইনুল হক ঢাকা থেকে প্রশাসনের সহযোগিতা চেয়ে গত ১৪ মে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে বাড়ির রাস্তার দুটি ছবিসহ ফেসবুকে একটি পোস্ট দেন।তিনি পরিবার নিয়ে ঢাকায় থাকেন এবং বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন।
ওই পোস্টে তিনি বাড়ির রাস্তা বন্ধের সমস্যা তুলে ধরার পাশাপাশি ফইজুল ইসলামের বিরুদ্ধে এলাকার অনেকের সঙ্গে জমি সংক্রান্ত বিরোধ, নারী ঘটিত সমস্যা ও জামায়াত/বিএনপির রাজনীতিসহ বিভিন্ন বিষয়ও তুলে ধরেন।
তবে ফেসবুক পোস্টের নিচে তিনি উল্লেখ করেন, আমি ঢাকা থেকে ঠাকুরগাঁও পুলিশকে ফোন দিলে ডিউটিরত পুলিশ অফিসার ব্যাপারটি স্থানীয়ভাবে মিমাংসার পরামর্শ দেয়। নতুবা অভিযোগ দায়ের করতে বলে।
এ দিকে, থানায় যেতে ভয় পাচ্ছে বাবা আর চাচা। আমি আর চাচাতো ভাই ঢাকায় থাকায় কিছু করতেও পারছি না।চেয়ারম্যান মহোদয়কে ফোন দিয়েছি তিনিও তার বিচারে বিরক্ত।
ফেসবুক ও স্থানীয়দের মাধ্যমে জানতে পেরে বাড়ির রাস্তায় লাগিয়ে দেয়া বাঁশের বেড়া খুলে দেয়ার ব্যবস্থা করেন রায়পুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম।এসময় তিনি বিষয়টি নিয়ে মিমাংসা করে দেয়ার কথাও জানান।
অপরদিকে ফেসবুকের ওই পোস্টকে কেন্দ্র করে ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেন ফইজুল ইসলাম ও তার পরিবারের সদস্যরা। এ ঘটনায় তিনি ঠাকুরগাঁও সদর থানায় একটি অভিযোগও করেছেন। ফইজুল ইসলাম ওই ইউনিয়নের কাঁচনা খুদিবাড়ি স্বতন্ত্র্য ইবতেদায়ী মাদরাসার প্রধান শিক্ষক।
মূল ঘটনা ২৩ মে ইফতারের ঠিক আগ মুহূর্তে। আবারও শুরু হয় রাস্তা নিয়ে বিরোধ। এবার দু’পক্ষ হামলায় জড়িয়ে পড়েন। এতে প্রায় ১০ জন আহত হন। তাৎক্ষণিকভাবে স্থানীয়দের সহযোগিতায় তারা ঠাকুরগাঁও সদর হাসপাতালে ভর্তি হয়। বর্তমানের দু’পক্ষের সবাই সুস্থ হয়ে বাড়িতে অবস্থান করছেন।
ঘটনার সময় ফইজুল ইসলাম পক্ষ সদর থানায় খবর দিলে পুলিশ নইম উদ্দিনের দুই ভাইকে আটক করে থানায় নিয়ে আসে। পরদিন ২৪ মে ফইজুল ইসলাম বাদী হয়ে ৭ জনের নাম উল্লেখ ও ২/৩ জনকে অজ্ঞাত আসামি করে থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। ওই মামলায় আটক দুইজনকে গ্রেফতার দেখিয়েছে পুলিশ।
মামলার আসামিরা হলেন, দরমিয়ান আলী (৪৫), দবিরুল ইসলাম (৫২), নইম উদ্দিন (৫৫), সাইদুর রহমান (২২), মো. রাকিব (১৯), মনোয়ারা বেগম (৪৫- নইম উদ্দিনের স্ত্রী) ও সালেমা খাতুন (৪০-দরমিয়ান আলীর স্ত্রী)।
এ ঘটনার কয়েকদিন পর সদর থানায় একটি মামলা করেন অপরপক্ষের নইম উদ্দিন। এ মামলার আসামিরা হলেন, ফইজুল ইসলাম ওরফে গুল্ঠু (৫০), ছেলে ইমরান হোসেন মাসুম (২৬), শামীম রানা (২৪), মেয়ে কামরুন নাহার দুলালী (২৮), ফারহানা রানী (১৯) ও ফইজুলের স্ত্রী মাহবুবা বেগম (৪৫)। এ মামলাতেও ৩/৪ জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে।
প্রতিবেশী রব্বানী ও করিম জানায়, বাড়ির রাস্তা নিয়ে দুই পক্ষের এই সমস্যা দীর্ঘদিনের। এলাকার চেয়ারম্যান ও মেম্বার এটা নিয়ে মিমাংসা করতে করতে তারা ক্লান্ত।
তারা জানায়, এ ঘটনা ছাড়াও ফইজুল ইসলামের বিরুদ্ধে এলাকার অনেকের সঙ্গে জমি সংক্রান্ত বিরোধ রয়েছে। এলাকার একজন তার কাছ থেকে জমি কিনে সব টাকাও দিয়েছে কিন্তু তিনি সেই জমি ক্রেতাকে রেজিস্ট্রি দিচ্ছেন না। তারা বলেন, জানি না প্রকৃত ঘটনা আসলে কি?
এ বিষয়ে কথা হয় ফইজুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, রাস্তার পাশের জমি আমার। তাদের যাতায়াতের জন্য জমি ছেড়ে দিয়ে বাঁশ দেয়া হয়েছিল। চেয়ারম্যান ও পুলিশ বাঁশ তুলে দেয়ার পর বিষয়টি সমাধানের দিকে যাচ্ছিল। কিন্তু নইম উদ্দিনের লোকজন আগে হামলা করে এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।
এ ঘটনায় নইম উদ্দিন বলেন, রাস্তার বিরোধের বিষয়টি ইউপি চেয়ারম্যান সমাধান করে দিয়েছিল। কিন্তু ফইজুল তা মানেনি। সে যখন আবার রাস্তায় বাঁশের বেড়া দিতে যায় তখন বিরোধের সৃষ্টি হয়।
এ প্রসঙ্গে রায়পুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম জানান, ফইজুল ও নইম উদ্দিনের রাস্তায় জমি নিয়ে বিরোধের সমাধান করে দেয়া হয়েছিল স্থানীয়ভাবে। কিন্তু ফইজুল সালিস না মানায় এ ঘটনায় সৃষ্টি হয়েছে।
ঠাকুরগাঁও সদর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তানভীরুল ইসলাম জানান, মারামারি ঘটনা জানার পরেই ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠিয়ে ২ জনকে আটক করা হয়েছে। পরে উভয়পক্ষ পৃথক ২টি মামলা দায়ের করেছে। মামলা তদন্ত করে আসামি গ্রেফতার করা হবে।
Leave a Reply