সংবাদ দাতা:রাকিব মাহমুদঃসাহারা খাতুন ১৯৪৩ সালের ১লা মার্চ ঢাকার কু্র্মিটোলায় জন্মগ্রহণ করে।তার পিতার নাম মরহুম ডা:আব্দুল আজিজ মাস্টার।তার বাবা পেশায় একজন হোমিওপ্যাথিক ডাক্তার ছিলেন।তার মায়ের নাম টুরজান নেসা।সাহারা খাতুন ছিলেন একাধারে একজন আইনজীবী ও রাজনীতিবিদ। তিনি তার সারা জীবনে দেশের মানুষের কল্যানের জন্য কাজ করে গেছেন।সাহারা খাতুনের রাজনৈতিক জীবনে ছিলেন আওয়ামীলীগের একজন নিবেদিত প্রাণ।
সাহারা খাতুনের রাজনৈতিক জীবন: সাহারা খাতুনের পিতা আব্দুল আজিজ পেশায় একজন ডাক্তার হলেও তিনি রাজনীতি সম্পর্কে ছিলেন সচেতন।মূলত তার পিতা আব্দুল আজিজের হাত ধরেই সাহারা খাতুনের রাজনৈতিক জীবনের হাতে খড়ি।সাহারা খাতুন ছাত্র জীবনেই রাজনীতিতে যুক্ত হন।১৯৬৬ সালের ৬ দফা আন্দোলনে তিনি সরাসরি অংশগ্রহণ করেন।এসময় তিনি বাড়ি বাড়ি গিয়ে ৬ দফার বই বিলি করেন।ঐতিহাসিক ৭ই মার্চের ভাষণে তিনি আওয়ামীলীগের মহিলা শাখার নেতাকর্মীদের নিয়ে জনসভায় যোগ দেন।২ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পতাকা উত্তোলনের দিনও তিনি সরাসরি অংশগ্রহণ করেন।এরপর সব আন্দোলনে তিনি প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে অংশগ্রহণ করেন।ছাত্র জীবনে তার প্রথম অর্জন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের এক নির্বাচনে বিজয়লাভ।তিনি তার রাজনৈতিক জীবনে পুরো সময় আওয়ামীলীগের হয়ে কাজ করেছেন।২০০৮ সালে সাহারা খাতুন ঢাকা-১৮ আসন থেকে আওয়ামীলীগের মনোনিত প্রার্থী নির্বাচিত হয়।জনগনের আস্থা ও ভালোবাসায় তিনি বিজয় অর্জন করলে তাকে বাংলাদেশের প্রথম মহিলা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব দেওয়া হয়।২০০৯ সালে বি ডি আর বিদ্রোহে ৫৩ জন সেনা কর্মকর্তা ও ৩ জন সেনা পরিবারের সদস্য নিহত হলে সাহারা খাতুন নিন্দিত ও সমালোচিত হয়।পরবর্তীতে সাহারা খাতুন সাহসিকতার সাথে বিদ্রোহীদের সাথে আলেচনার প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দিয়ে মিমাংষা করে।২০১২ সালে মন্ত্রী সভার রদবদল হলে সাহারা খাতুনকে ডাক ও টেলি যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেয়া হয়।তিনি গত তিন মেয়াদে ঢাকা-১৮ আসনে সংসদ সদস্য ছিলেন।তার রাজনৈতিক জীবন ছিল সাফল্য মণ্ডিত।তিনি বাংলাদেশের ছিলেন বাংলাদেশের একজন উজ্জ্বল ও বুদ্ধি দীপ্ত রাজনিতীবিদ।
সাহারা খাতুনের শিক্ষা জীবন: সাহারা খাতুনের শিক্ষা জীবন শুরু হয় তার বাবার প্রতিস্থিত স্কুল থেকে।তার বাবার স্কুল এ সাহারা খাতুন দ্বিতীয় শ্রেণী পর্যন্ত লেখাপড়া করেন।তিনি কুর্মিটোলা হাইস্কুল ৫ম শ্রেণী প্রর্যন্ত এবং পুরান ঢাকার মুসলিম গার্লস হাইস্কুল থেকে ৯ম শ্রেণী ও সিদ্বেশ্বরী গার্লস হাইস্কুল থেকে ইস্ট পাকিস্তান বোর্ডের অধীনে মেট্রিক পাশ করেন।তারপর তিনি সিটি নাইট কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট পাশের পর জগন্নাথ কলেজে বিএ ডিগ্রিতে ভর্তি হন।অসুস্থতার কারণে বিএ পরিক্ষা দিতে না পারলে তিনি তার চাচার সাথে করাচিতে চলে যান।সেখানে তিনি করাচি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ২য় শ্রেনিতে বিএ ডিগ্রী অর্জন করে।আইনের প্রতি প্রবল আগ্রহের কারণে ১৯৬৭ সালে পরিক্ষা দিয়ে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগে ভর্তি হয়।পরবর্তীতে তিনি রাজনীতির সাথে জড়িয়ে পড়লে তার এল এল বি ডিগ্রী অর্জন করা না হলে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত সেন্ট্রাল কলেজ থেকে এলএলবি ডিগ্রী অর্জন করে রাজনৈতিক পেশায় নিয়োজিত হয়।
কর্ম জীবনে সাহারা খাতুন: এলএলবি ডিগ্রী অর্জনের পর সাহারা খাতুন ১৯৮১ সালে তার কর্ম জীবন শুরু করে।তিনি ছিলেন তৎকালীন বাংলাদেশ আওয়ামী আইনজীবী পরিষদের প্রতিস্থাতা সভাপতি। তিনি আওয়ামীলীগের আইন সচিব হিসেবে দায়ীত্ব পালন করেন।এছাড়া তিনি সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী পরিষদের সভাপতি ও বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের ফিনান্স কমিটির সাবেক চেয়ারম্যান ছিলেন।এছাড়া তিনি তার রাজনৈতিক জীবনে বাংলাদেশের প্রথম মহিলা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও ডাক ও টেলি যোগাযোগ মন্ত্রীর দায়ীত্ব পালন করেন।তিনি ছিলেন আওয়ামীলীগ থেকে ৩ বার নির্বাচিত মহিলা সংসদ সদস্য। তিনি ছিলেন আওয়ামীলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য।
আওয়ামীলীগের এই বর্ষীয়ান নেত্রী গত ২ জুন ২০২০ তারিখে জ্বর,এলার্জি ও বার্ধক্য জনিত নানা রোগে আক্রান্ত হয়ে ঢাকার ইউনাইটেড হাসপাতালে ভর্তি হয়।পরবর্তীতে কিছুটা সুস্থ হলেও আবার অবনতি হলে ১৯ জুন তাকে আই সি ইউ তে নেওয়া হয়।পরবর্তীতে অবস্থা আরও খারাপ হলে তাকে ব্যাংকক বামুনগ্রাড হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।সেখানে ৯ জুলাই ২০২০ তারিখে ৭৭ বছর বয়ছে মারা যায় বাংলাদেশের এই মহিয়সী রাজনীতিবিদ।
Leave a Reply