মোঃ মারুফবিল্লাহ, কালিগঞ্জ (সাতক্ষীরা) প্রতিনিধিঃ১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে সাতক্ষীরা কালিগঞ্জের সোহরাওয়ার্দী পার্কে অবস্থিত কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের স্মরণে মোমবাতি প্রজ্বলন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। সোমবার সন্ধ্যায় মোমবাতি প্রজ্বলন শেষে শহীদ বুদ্ধিজীবিদের স্মরণে ১ মিনিট নিরবতা পালন করা হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে মোমবাতি প্রজ্বলন করেন কালিগঞ্জ উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামীলীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি সাঈদ মেহেদী। প্রধান অতিথির বক্তব্যে সাঈদ মেহেদী বলেন, স্বাধীনতার পর ধর্ষিতা বাঙালি মহিলাদের চিকিৎসায় নিয়োজিত অষ্ট্রেলিয় ডাক্তার জেফ্রি ডেভিস গনধর্ষণের ভয়াবহ মাত্রা দেখে হতবাক হয়ে কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্টে আটক এক পাক অফিসারকে জেরা করেছিলেন এই বলে- যে তারা কিভাবে এমন ঘৃণ্য কাজ করেছিলো। তাদের সরল জবাব ছিলো, “আমাদের কাছে টিক্কা খানের নির্দেশনা ছিলো, যে একজন ভালো মুসলমান কখনোই তার বাবার সাথে যুদ্ধ করবে না। তাই আমাদের যত বেশী সম্ভব বাঙালী মেয়েদের গর্ভবতী করে যেতে হবে। আমাদের এসব উশৃঙ্খল মেয়েদের পরিবর্তন করতে হবে, যাতে এদের পরবর্তী প্রজন্মে পরিবর্তন আসে। তারা যেন হয়ে ওঠে ভালো মুসলিম এবং ভালো পাকিস্তানী।” এক ফরাসি পত্রিকার সাক্ষাৎকারে জেনারেল নিয়াজী বলেছিলেন, ” আমার সেনাবাহিনী যুদ্ধ করছে পূর্ব পাকিস্তানে, রেপ কী পশ্চিম পাকিস্তানে গিয়ে করবে? ” আজ কেন যেন মনে হয় টিক্কা খান এবং নিয়াজীরা একাত্তরে হেরে গেলেও আসলে জিতে গেছে। আজ রাস্তা-ঘাটে পাকিস্তানীদের অসংখ্য সমর্থক পাওয়া যায়, যারা চিৎকার করে স্লোগান তোলে ম্যারি মি আফ্রিদি, অনলাইনে পুরান ঘটনা ভুলে গিয়ে পাকিস্তানীদের শীতল ঘৃণার পরিবর্তে উষ্ণ ভালোবাসা দেবার পরামর্শ দেন কিছু আধুনিক তরুণ, অযুতনিযুত শহীদের শবের উপর দাঁড়িয়ে। তাদের দৃষ্টিতে ইকবালের কাছে রবীন্দ্রনাথ কিছুই না, পাকিস্তানী জাল ব্যান্ডের গানের কাছে সোনার বাংলা ক্ষ্যাতফসল, ইসলামাবাদ বা করাচীর সৌন্দর্যের কাছে বান্দরবান বা রাঙ্গামাটি বোগাস, লাহোর বা করাচীর কামিজ পড়া একজন সাদা চামড়ার মেয়ের তুলনায় বাঙ্গালী নারীরা এসব তরুণদের কাছে নিতান্তই নীরস। মনেপ্রাণে পাকিস্তানী এসব তরুণেরা কি জানে একাত্তরের মার্চে মিরপুরের সেই বীভৎসতার কথা বাড়ি থেকে পরিবারের সবাইকে ধরে এনেছিল পাকিস্তানীরা, কাপড় খুলতে বলেছিল সবাইকে? রাজি না হওয়ায় বাবা ও ছেলেকে আদেশ করা হয় যথাক্রমে মেয়ে এবং মাকে ধর্ষণ করতে। এতেও রাজি না হলে প্রথমে বাবা এবং ছেলেকে টুকরো টুকরো করে হত্যা করা হয় এবং মা মেয়ে দুজনকে দুজনের চুলের সাথে বেঁধে উলঙ্গ অবস্থায় টানতে টানতে ক্যাম্পে নিয়ে যাওয়া হয়। পাকিস্তানী নারীদের দেখে কামোত্তেজিত এসব তরুণেরা কি জানে- একাত্তরে বাঙ্গালী নারীদের পাকিস্তানী সেনারা ধরে এনে কি পৌশাচিক নির্যাতন করতো? রাজারবাগে পুলিশ লাইনে ধরে আনা বাঙ্গালী নারীদের উপর একসাথে ঝাঁপিয়ে পড়ত ওরা, ধর্ষণ করতে করতে হঠাৎ ছুরি দিয়ে স্তন কেটে, পশ্চাৎদেশের মাংস কেটে, যোনি ও গুহ্যদ্বারের মধ্যে সম্পূর্ণ ছুরি চালিয়ে দিয়ে অট্টহাসিতে ফেটে পড়তো ওরা, মাঝে মাঝে বন্দুকের নল, বেয়নেট ও ধারালো ছুরি ঢুকিয়ে যোনি থেকে গলা পর্যন্ত চিরে ফেলতো, তারপর এ সকল মেয়ের লাশ অন্যান্য মেয়েদের সম্মুখে ছুরি দিয়ে কেটে কুচি কুচি করে বস্তার মধ্যে ভরে বাইরে ফেলে দিত। আর ছোট ছোট বালিকাদের যখন ধর্ষণে সুবিধা করতে পারতো না, তখন ওদের অসার রক্তাক্ত দেহ বাইরে এনে দুজন দু পা দু দিকে টেনে ধরে চড়চড়িয়ে ছিঁড়ে ফেলে দিত। কালিগঞ্জ প্রেসক্লাবের সাধারন সম্পাদক সুকুমার দাশ বাচ্চু’র সঞ্চালনায় মোমবাতি প্রজ্জ্বলন অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) নাজিবুল আলম।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন কালিগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) দেলোয়ার হুসেন, উপজেলা প্রকৌশলী জাকির হোসেন, উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ও তারালী ইউপি চেয়ারম্যান এনামুল হোসেন ছোট, উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ডের সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার শেখ মেহেদী হাসান সুমন, সাধারণ সম্পাদক এসএম গোলাম ফারুক, ধলবাড়িয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি সজল মুখার্জী, মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার আবুল কালাম আজাদ, রিপোর্টার্স ক্লাবের সভাপতি সহকারী অধ্যাপক নিয়াজ কওছার তুহিন, সাংগঠনিক সম্পাদক ও উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি শেখ শাওন আহমেদ সোহাগ, সোহরাওয়র্দী পার্ক কমিটির সদস্য সচিব অ্যাড. জাফরুল্ল্যাহ ইব্রাহিম, থানার উপ-পরিদর্শক হাফিজুর রহমান, উপজেলা যুবলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহমান, উপজেলা যুবলীগের সহ-সভাপতি রেজাউল করিম, তথ্য প্রযুক্তিলীগের সভাপতি মাসুদ পারভেজ, তাঁতীলীগের সভাপতি আবু বক্কার, কুশুলিয়া ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ওসমান খান প্রমুখ। এসময় উপস্থিত ব্যক্তিবর্গ ৭১-এর ১৪ ডিসেম্বর সারা দেশে বুদ্ধিজীবীদের নারকীয় হত্যাযজ্ঞের কথা তুলে ধরে পাকিস্তানিদের দোসর রাজাকার আলবদরদের তালিকা তৈরি করে তাদের শাস্তির দাবি করেন।
Leave a Reply