1. admin@protidinershomoy.com : admin :
  2. nasimriyad24@gmail.com : ডেস্ক রিপোর্ট : ডেস্ক রিপোর্ট
  3. wp-configuser@config.com : James Rollner : James Rollner
শুক্রবার, ০৩ মে ২০২৪, ০৬:২৭ পূর্বাহ্ন

আধুনিক প্রযুক্তির স্রোত ধারায় হারিয়ে গেছে রুপসী বাংলার ঐতিহ্য অপরুপ সৌন্দর্যের প্রতীক ‘পালকি’!

এম.দুলাল উদ্দিন আহমেদ
  • সময় : বৃহস্পতিবার, ৪ জুন, ২০২০
  • ৩১৮ জন পড়েছেন

যুগে প্রযুক্তির স্রোত ধারায় হারিয়ে গেছে হাজার বছরের ঐতিহ্য অপরুপ সৌন্দর্যের প্রতীক ‘পালকি’। রুপসী বাংলার ঐতিহ্য পালকি এখন আর চোঁখে পড়ছে না। কয়েক বছর আগে গ্রামের বিয়ের বর-বধূকে বাহনের অন্যতম বাহন ছিল এই পালকি। পালকির সঙ্গে মিশে ছিল মধুময় এক স্বপ্ন। গায়ের পথে পালকি করে নববধুকে নিয়ে যাওয়ার দৃশ্য দেখতে গ্রামের ছেলে-মেয়েরা রাস্তায় আর বৌ-ঝিয়েরা বাড়ির ভিতর থেকে উঁকি-ঝুঁকি মারতো। পালকির মধ্যে বসা বৌকে দেখে তারাও হারিয়ে যেতো কল্পনার রাজ্যে। ছয় বেয়ারা পালকি কাঁধে নিয়ে ছন্দ তুলে বৌকে নিয়ে যেতো বাংলার সুজলা-সুফলা-শস্য-শ্যামল মেঠো পথে। এ যুগের বধুরা আর পালকিতে লজ্জারাঙ্গা মুখে শ্বশুর বাড়িতে যায় না।

শ্যামল বাংলার সেই মেঠো পথ এবং নতুন বধু সবই আছে কিন্তু যান্ত্রিক যুগে নেই শুধু পালকি। এই বাংলা চিরদিনই প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি। বাংলায় আগে বার মাসে তের পার্বণ হতো। বছরের ছয়টি ঋতু পর্যায় ক্রমে বাংলাকে নব-নব সৌন্দর্যে বিভূষিত করে। শেষ তিন ঋতু গ্রামবাংলাকে আরো বেশি মনোমুগ্ধ এবং আকর্ষণীয় করে তোলে। আগে গ্রামে-গঞ্জে,শহরে হেমন্ত এবং শীত ও বসন্তকালে বিবাহ বেশি অনুষ্ঠিত হতো। গ্রামের মানুষরা বলতো দিন-কাল আসলে আমি আমার ছেলে মেয়েকে বিয়ে দিয়ে দেবো। অর্থাৎ শীতকালেই বিয়ের সানাই বেশি বাজতো। এই বিয়ের অন্যতম বাহন ছিল পালকি। বর এবং কনেকে বিয়ের পর পালকি করে নিয়ে আসতো।

সন্ধ্যার পর বরকে পালকি করে নিয়ে কনের বাড়িতে যেতো। সারারাত্রি কনের বাড়িতে অতিবাহিত করার পর শেষ রাত্রে বর এবং কনের বিয়েসাদী সম্পাদন শেষ হলে পালকি করে বর এবং কনেকে বরের বাড়ি নিয়ে আসতো। একটি পালকিতে বেহারা দুইজন কিংবা চারজন থাকতো। দুই পালকিতে চারজন কিংবা আটজন বেহারা থাকতো। সামনে থাকতো বরের পালকি এবং পিছনে থাকতো কনের পালকি । সে সময় গ্রামে একটি প্রথা ছিল বরের পালকির আগে কনের পালকি গেলে অমঙ্গল বা অকল্যাণ হবে। এজন্য কোনক্রমেই বরের পালকির আগে কনের পালকি আসতে পারতো না।

পালকি নামটির উৎপত্তি হয়েছে ফারসি ও সংস্কৃত উভয় ইন্দো ভারতীয় ভাষা এবং ফরাসি থেকে। সংস্কৃতে পলাঙ্কিকা। পালকি দেখতে অনেকটা কাঠের বাক্সের কাঠামো। দৈর্ঘ্য ৬ ফুট প্রস্থ তার অর্ধেক কাঠামো লম্বা দুপাশে বাঁশের সাহায্যে গাঁথা। পালকির উপরে দামী কাপড় দ্বারা মোড়ানো থাকতো। তৎকালীন বাঙ্গালির সংস্কৃতিতে পালকির অবস্থান ছিল সুদৃঢ়। আগের দিনে গ্রামে জমিদারী প্রথা চলাকালে জমিদারের ছেলে,মেয়ে,স্ত্রী ও পুত্রবধু সকলে নিজস্বভাবে পালকি ব্যবহার করতো। এছাড়াও বিত্তশালী পরিবারগুলোতেও নিজস্ব পালকি ও বেয়ারা থাকতো। আর নিম্নবিত্তরা তাদের বৌ-ঝিদের আনা নেয়ার জন্য বিত্তশালীদের নিকট থেকে ভাড়া করতো পালকি। অন্যসব কাজে পালকি ব্যবহার হলেও বিয়ে-সাদিতে পালকির ব্যবহার ছিল অপরিহার্য্য।

পালকির ব্যবহার কিভাবে কখন এদেশে শুরু হয়েছিল তা সঠিকভাবে জানা যায়নি। তবে মোঘল ও পাঠান আমলে বাদশাহ-সুলতান,বেগম ও শাহাজাদীরা পালকিতে যাতায়াত করতো বলে জানা গেছে। ইংরেজ আমলের নীলকররা পালকিতে করে এক স্থান থেকে অন্যস্থানে ঘুরে বেড়াতো। আর সেজন্যই পালকি অভিজাত শ্রেণীর বাহন হিসেবে গণ্য করা হতো। বর্তমান যুগের নববধুরা পালকিতে চড়ে শ্বশুর বাড়িতে যাওয়ার স্বপ্ন দেখে না। তারা জাকজমকভাবে সাজানো প্রাইভেটকার আর মাইক্রোবাসে চড়ে শ্বশুর বাড়িতে যায়।

তবে সেদিন আর বেশি দূরে নয়,যেদিন আমাদের নতুন প্রজন্ম পালকি নামক মানুষের ঘাড়ে চড়ে বসা কোন বাহনের কথা বই পুস্তকে পড়বে এবং লোকশিল্প যাদুঘরে গিয়ে সাজানো গোছানো কৃত্রিম পালকি দেখবে,তখন হয়তো নতুন প্রজন্ম বুঝবে পালকি কি এবং পালকি কি কাজে ব্যবহার হতো ? হাজার বছরের ঐতিহ্য এবং বাঙ্গালীর হৃদয়ে গাঁথা সেই পালকি আজ অবলুপ্তি হয়েগেছে।

কাজেই ঐতিহ্য রক্ষার্থে অবলুপ্ত হয়ে যাওয়া রূপসী বাংলার এই অপরুপ সৌন্দর্যের প্রতীক পালকির ব্যবহার পুনরায় চালু করা উচিত। এতে একদিকে বিয়ে বাড়িতে বিভিন্ন গাড়ির মহড়ার সাথে পালকির মহড়া প্রদর্শন হবে অন্যদিকে আমাদের বাঙ্গালীর সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য টিকে থাকবে। আর যদি আমরা আমাদের বাঙ্গালিয়ানা ভুলে গিয়ে পাশ্চাত্যের সংস্কৃতির মাঝে মিশে যাই তাহলে বাংলা ভাষা ও বাঙ্গালীর জীবন থেকে চিরতরেই হারিয়ে যাবে বাংলার ঐতিহ্যবাহী পালকি।

সংবাদটি আপনার সামাজিক মাধ্যমে শেয়ার দিন

এই ক্যাটাগরীর আরোও সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

বিশেষ সংখ্যা

%d bloggers like this: